কথায় বলে যত্র জীব, তত্র শিব। শিব অভয়শীল, সর্বদা কৃপাশালী এবং সদারক্ষাকারী। তিনি অল্পেই তুষ্ট হন। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। কিন্তু ভারত জুড়ে শিব লিঙ্গরূপে বিরাজমান এবং পূজিত। শাস্ত্রে বলা হয়েছে এই দৃশ্যমান জগৎ সংসার সৃষ্টির বহু বহু আগেই তিনি ছিলেন। তাঁর আদি নেই, অন্ত নেই। কেন শিবলিঙ্গ পূজিত হয়! এই পূজার মাহাত্ম্য কী! কবে থেকে শুরু হল এই পূজা? শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ভগবান শিব ব্রহ্মস্বরূপ। তাঁর পূজা হয় দুই ভাবে, মূর্তিতে এবং লিঙ্গে। তবে আমাদের দেশে লিঙ্গ পূজার চল বেশি। দেবাদিদেব মহাদেব নিরাকার, আবার তিনি সাকারও। নিরাকার ক্ষেত্রে তাঁর পূজা হয় লিঙ্গে আর সাকাররূপে তাঁর পূজা হয় মূর্তিতে। অনেকেই মনে করেন, শিবলিঙ্গ আসলে জননেন্দ্রিয়। এই তথ্য কি আদতে ঠিক? ‘লিঙ্গ’ শব্দটির উৎপত্তি সৎস্কৃত ‘লিঙ্গম্’ থেকে, যার অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন। তাই শিবলিঙ্গ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো শিবের মাথা। তবে অজ্ঞতাবশত লিঙ্গ শব্দটি তার অর্থ পরিবর্তন করে বাংলায় ‘পুরুষ জননেন্দ্রিয়’ অর্থ লাভ করেছে যা বিকৃত। শিব লিঙ্গের উপরে বা শিবের কপালে ৩টি সাদা দাগ থাকে যাকে বলে ত্রিপুণ্ড্র।
ধ্যানমগ্ন শিবের প্রতীক এই শিবলিঙ্গ। মহাদেব আত্মধ্যানে স্বরূপে লীন থাকেন, মানুষকেও উপদেশ দেন আত্মনিমগ্নতার।
আরও শুনুন – Spiritual: শাস্ত্রমতে কেন একাদশী গুরুত্বপূর্ণ তিথি?
শাস্ত্রে বিভিন্নভাবে লিঙ্গের ব্যাখ্যা বলা হয়েছে, পণ্ডিতরা বলেন, ‘লয়ং যাতি ইতি লিঙ্গম্, লয়ং গচ্ছতি ইতি লিঙ্গম’ অর্থাৎ যাঁর মধ্যে সমস্ত কিছু লয় প্রাপ্ত হয়, তাই লিঙ্গ। অনেকে আবার একটু বদলে বলেন যা শরীরের মধ্যে লীন হয়ে থাকে এবং যার অনুপস্থিতিতে দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়, সেই হল লিঙ্গ। বীজের মধ্যে যেমন বীজের অঙ্কুরিত হওয়ার শক্তি এবং ক্রিয়া লুকিয়ে থাকে, তেমনভাবেই এই ত্রিভুবনাতীত সংসারে যার মধ্যে শক্তিরূপে ক্রিয়া করে সেই হল লিঙ্গ।
শিবলিঙ্গের রহস্য সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান লাভ অসম্ভব। জ্ঞানলাভ তখনই সম্ভব, যখন আত্মজ্ঞান সাধন হবে। শাস্ত্রে তাই বলা হয়েছে,
অপময়ং হি সৌম্য ইদং মনঃ
অপোময়ঃ প্রাণঃ
তেজোময়ী বাগ্ ইতি–
মনঃ হল অন্নময়, প্রাণ জলময় এবং বাক্য তেজোময়। তাই আত্মজ্ঞান ছাড়া শিবলিঙ্গের রহস্য ভেদ করা অসম্ভব। শাস্ত্র এবং শিবপুরাণ অনুযায়ী লিঙ্গ রয়েছে পাঁচ প্রকার— স্বয়ম্ভূ লিঙ্গ, বিন্দু লিঙ্গ, প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গ, চর লিঙ্গ, এবং ম গুরু লিঙ্গ। এছাড়াও শাস্ত্রে উল্লেখ আছে বাণলিঙ্গের কথা এই বাণলিঙ্গের ওপর সব দেবতার পূজার্চ্চনা করা হয়। এই বাণলিঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর লিঙ্গটি হল পারদলিঙ্গ। ভারতে অতিপ্রসিদ্ধ বারোটি প্রধান শিবতীর্থে জ্যোর্তিলিঙ্গ রয়েছে, সেই উল্লেখ পাওয়া যায় বহু শাস্ত্রে।
আরও শুনুন – Spiritual: হিন্দু ধর্মে কি সত্যিই আছে ৩৩ কোটি দেবতা?
শাস্ত্রানুসারে মহাদেবের ব্রহ্মভাব নিষ্কল রূপ হল লিঙ্গ এবং আকার রূপে তিনি মহেশ্বর। এই দুটি তাঁর সিদ্ধরূপ। তিনি কলাযুক্ত আবার অকল। শিবলিঙ্গ নিষ্কল ব্রহ্মরূপী। এই লিঙ্গকে নিত্যপূজার উপদেশ দেবাদিদেব স্বয়ং বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাকে দিয়েছিলেন।
শাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে একটি গল্প। সেই গল্প থেকে জানা যায় পুরুষ এবং প্রকৃতির পরম প্রসন্নতায় সৃষ্টি হওয়া ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে একবার লাগল প্রবল যুদ্ধ। … বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।