মরণের পর আত্মার কি হয়! এই প্রশ্ন যে কোনও কৌতূহলী মানুষের মনের মধ্যে সদা গুঞ্জরিত। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নানা ক্ষেত্রে অনেক দ্বারস্থ হয়েছেন বিবিধ মাধ্যমের। কেউ দ্বারস্থ দর্শন বা বিজ্ঞানের, কেউ দ্বারস্থ কাব্যের বা পুরাণের। সমস্ত দর্শন এবং বিজ্ঞান বহু শতাব্দী ধরেই চেষ্টা করেছে মানুষের জীবন-রহস্য উদ্ঘাটন করতে। শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
কেউ বলে থাকেন, যতদিন দেহ থাকে, ততদিনে দেহকন্দরে আত্মাও থাকে, দেহের মৃত্যুর সঙ্গে আত্মারও মৃত্যু হয়। কিন্তু অনেকেই বলেন আত্মা তো অবিনাশী। দেহের মৃত্যু হলেই কি আত্মার বিনষ্ট হয়!
আমাদের মনে পড়বে, মহাভারতে বকরুপী ধর্মের সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের কথোপকথন। সেখানে বক যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন, মানুষ মরণশীল। জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই নিয়ত সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা সত্ত্বেও সে বেঁচে থাকতে চায়, এ এক আশ্চর্যের কথা।
আবার কঠোপনিষদে যম বলেছেন,
অবিদ্যায়ামন্তরে বর্তমানঃ স্বয়ং ধীরা পণ্ডিতম্মন্যমানাঃ
দন্দ্রমম্যাণাঃ পরিষন্তি মূঢ় অন্ধেনৈব নীয়ামানা যথাক্ষঃ।।
আরও শুনুন: Spiritual: এ জগতে প্রকৃত গুরু আসলে কে?
অর্থাৎ ধন-কামনা পার্থিব সম্পদের মোহতে যারা অন্ধ, প্রলুব্ধ ও প্রবঞ্চিত তারা অবোধ শিশুর ন্যায়, সেসব মানুষের চিত্তে পরলোকের সত্তা অনুপস্থিত। তারা মূঢ়ের মতোই বলে, এই পৃথিবীই সব কিছু, এ ব্যাতীত পরলোক বলে আলাদা কিছুই নেই।
অথচ ঋগ্বেদে আত্মার মরণের পর আত্মার আর্তি-অবস্থান বিষয়ে বলা হয়েছে,
না সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমদ্যাত্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্
অরং লোকো নাস্তি পরা ইতি মানী, পুনঃ পুনর্বশমাপদ্যতে মে।।
হে ঈশ্বর আমায় বিশ্বলোকের সেই অক্ষয় আলোকের উৎসে নিয়ে যাও, আমাকে অমর করো।
প্রাচীন হিন্দুধর্মে একটি মাত্র স্বর্গে বিশ্বাস করতেন সবাই। সেই স্থানের নাম, ‘ব্রহ্মলোক’। অর্থাৎ প্রজাপতির ব্রহ্মার সাম্রাজ্য। মানুষের বিশ্বাস জীবদ্দশায় যে ভালো কাজ করে, মৃত্যুর পর তাঁদের কর্মফল ভোগ না হওয়া অবধি এখানেই সেই আত্মা বাস করেন। এরপর আপন-আপন কামনা এবং কর্ম অনুসারে তাঁরা পুনরায় জন্ম গ্রহণ করেন। এঁরা বিশ্বাস করতেন, চন্দ্রলোক সেই স্থান, যেখানে পিতৃপুরুষের প্রেত আত্মারা বসবাস করেন। চাঁদ থেকেই পৃথিবীতে ঝরে পড়ে প্রাণের বীজ। আত্মা প্রেতরূপে যে পথে চন্দ্রলোকে গিয়ে পুণ্যকর্মের ফলস্বরূপ আনন্দ উপভোগ করেন, তাঁকে বলা হত ‘পিতৃযান’।
আরও শুনুন: Spiritual: হিন্দু ধর্মে কি সত্যিই আছে ৩৩ কোটি দেবতা?
যারা পবিত্র ও শুদ্ধ জীবনযাপন করেন তাঁরা যান, ব্রহ্মলোকে। তাঁরা এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। যারা আত্মজ্ঞানী বা সাধক তাঁরা ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হন বা মোক্ষ লাভ করেন। সেই জ্ঞানী, অদ্বিতীয় এবং অনন্তকাল ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্নতা-প্রতিপালিত হয়ে থাকেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।