রবীন্দ্রনাথের গানে রয়েছে, ‘আরও প্রেমে আরও প্রেমে, মোর আমি ডুবে যাক নেমে’…। এই ‘মোর-আমি’ বলতে কাকে বোঝালেন কবি! শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
মানুষের আধ্যাত্মিক বিকাশ একটি অবিরাম শিক্ষা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘মানুষের যে পূর্ণতা প্রথম থেকেই বিদ্যমান, শিক্ষা তারই প্রকাশ এবং মানুষের অন্তরে যে দেবত্ব প্রথম থেকেই নিহিত রয়েছে, ধর্ম তারই প্রকাশ।’ সকল পুরুষ ও নারীকে অর্জুনের মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছেন গীতায় ভগবান আহ্বান জানিয়েছেন,
উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ।
আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ।।
আরও পড়ুন – Spiritual: জীবন থেকে কাম এবং ক্রোধের নিবারণ হবে কী করে?
আত্মার দ্বারা আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার করবে, আত্মাকে অবসন্ন করবে না; কারণ আত্মাই আত্মার বন্ধু এবং আত্মাই আত্মার শত্রু।
কিন্তু নিজেই নিজের বন্ধু আবার নিজেই নিজের শত্রু— একই করে সম্ভব? এর পরের শ্লোকেই দেওয়া রয়েছে এই বিষয়ের উত্তর,
বন্ধুরাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মৈবাত্মানা জিতঃ
অনাত্মনস্তু শত্রুত্বে বতেতাত্মৈব শত্রুবৎ।
যখন কোনও ব্যাক্তি নিজেকে জয় করে, যখন তাঁর মন ইন্দ্রিয়সমূহের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সে নিজেই হয় নিজের বন্ধু। অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি যেন নিজেই নিজের শত্রুর মতো আচরণ করে। প্রকৃতপক্ষে আত্মা একটিই এবং সে নিজেই। সুতরাং এ-কথার অর্থ নিজেই নিজেকে প্রকৃতির বন্ধন থেকে উদ্ধার করবে, নিজেকে অধোগামী করবে না। জীব নিজেই নিজের শত্রু, নিজেই নিজের মিত্র। মনকে যদি বিষয় থেকে প্রত্যাহৃত করা যায় তবে সেই আত্মসংস্থ হয়, তখন আত্মা স্ব-রূপে প্রকাশিত হন।
আরও পড়ুন – Spiritual: সংযম অভ্যাসেই কি এগিয়ে যাওয়া যায় ঈশ্বরলাভের পথে?
এই হল আত্মার উদ্ধার। এই আত্মচেষ্টা। এই আত্মচেষ্টা অভ্যাসযোগ। এই আত্মার মধ্যেই, আমির মধ্যেই, শুভ সংকল্প, বিবেক-বৈরাগ্য, বিচার-বুদ্ধিও আছে, আবার বিষয় বিমুগ্ধ অহংবুদ্ধি আছে। এর একটি দ্বারা অপরটিকে উদ্ধার করতে হবে, বিষয়ে মগ্ন হতে দেবে না। একজন আমার মিত্র, অপরটি আমার শত্রু। যে আমি অহংবুদ্ধি নাশ করেছে, মনকে বিষয় বিরক্ত করেছে সে আমি আমার মিত্র। যে ‘আমি’র অহংবুদ্ধি নাশ হয়নি, মন বিষয় হইতে বিমুক্ত হয়নি, সে ‘আমি’ আমার শত্রু। সে বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়ে শত্রুতাচারণ করবেই। বস্তুত বিষয়াসক্ত মনই জীবের বন্ধনের কারণ, এবং বিষয়বিমুক্ত মনই তার মোক্ষের কারণ—‘মন এব মনুষ্যনাং কারণং বন্ধমোক্ষয়োঃ’।
বাকিটা শুনুন প্লে-বাটন ক্লিক করে।