ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব বলতেন ‘ডুব্ দে’। কোথায় ডুব্ দেবে মানুষ! ধর্মের নামে যখন আচার পালন মুখ্য হয়ে ওঠে তখন ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। প্রকৃত সাধনা আর ধর্মের আচার পালনের মধ্যে ফারাক বিস্তর। অধ্যাত্ম সাগরে ঝাঁপ না দিলে ঈশ্বরলাভ কখনোই হবেনা। কোথায় ডুব্ দেবে মন! সেই কথাই শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব দুটি গান খুব পছন্দ করতেন। একটি তো প্রায়শই নিজে গাইতেন,
‘ডুব্ ডুব্ ডুব্ রূপসাগরে আমার মন।
তলাতল পাতাল খুঁজলে পাবি রে প্রেম রত্নধন।’
ঠাকুরের এই গান খুব পছন্দ ছিল। কঠোপনিষদ থেকে শ্রীমদ্ভগভবদ্গীতা সবখানেই অধ্যাত্ম চিন্তা এবং চর্যার যে বিষয়, অধ্যাত্ম সাগরে ঝাঁপ না দিলে তো তা লাভ হয় না। সর্বশক্তি নিয়ে অধ্যাত্ম সাধনায় মগ্ন হওয়ার জন্যই শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভক্তের কাছে এই শব্দ দুটিকে ব্যবহার করেন।
ধর্মের প্রতি মানুষের লোকদেখানো একরকমের আনুগত্য থাকে। ধর্মের নামে শুধুই আচার পালন সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের আড়ম্বর এবং প্রকৃত অধ্যাত্ম সাধনার মধ্যে বিস্তর প্রভেদ রয়েছে। প্রকৃত অর্থ এবং লক্ষ্য বিষয়ে অনাগ্রহী হয়ে ধর্মকে যদি শুধুমাত্র প্রচলিত প্রথা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন ব্যাক্তিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে ধর্ম তার সমস্ত আধ্যাত্মিক শক্তি হারিয়ে ফেলে।
আরও শুনুন: Spiritual: দেহের মৃত্যু হলে আত্মাও কি বিনষ্ট হয়?
শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও বিশেষ বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং প্রচলিত উৎসবের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতেন, তা কিন্তু নয়, কিন্তু তাঁর মত ছিল জীবনের প্রধান লক্ষ্য ঈশ্বরলাভ। আর সেই উদ্দেশ্যে প্রচলিত আচার অনুষ্ঠান অকিঞ্চিৎকর। জীবনে তিনিই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। চিন্তা আশা আকাঙ্ক্ষা কর্ম তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রসঙ্গে ঠাকুর একটি ছোট্ট উপমার উল্লেখ করতেন। ‘এক’ সংখ্যাটির পরে শুন্য বসাতে থাকলে সংখ্যাটির মান ক্রমাগত বাড়তে থাকে– এক থেকে একশ, এক হাজার, দশ হাজার, এক লক্ষ এভাবেই ক্রমশ বাড়তেই থাকে। সেরকম মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের স্থান অই এক সংখ্যাটির মতোই। জীবনে যদি ঈশ্বরের যদি কোনও স্থান না থাকে, তবে সেই সাধনা অর্থহীন বা শুন্যে পরিণত হয়।
আরও শুনুন: Spiritual: এ জগতে প্রকৃত গুরু আসলে কে?
শ্রীরামকৃষ্ণদেব বললেন, ডুব্ দাও। তিনি সেই কথার ব্যাখ্যা এবং আশাস্বরূপ বলেছিলেন, ‘এবার ঈশ্বর সাগরে ডুব্ দাও; এই সাগরে ঝাঁপ দিলে মৃত্যুর কোনই ভয় নেই কারণ এ যে অমৃতের সাগর।’ আধ্যাত্মিক পথের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ভীতির কোনও কারণ নেই। কারণ সেই পথ কখনও অন্ধকার বা অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয় না। এপথে যতটুকু ত্যাগ থাকে তার থেকেও বেশি থাকে প্রাপ্তি। ঠাকুর দেখেছিলেন অধ্যাত্মজ্ঞানের সঙ্গে তর্ক এবং বিতণ্ডা দিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তির। অনেকেই ধর্মকে পুঁথিগত বিদ্যে এবং দর্শনের সঙ্গে ঘেঁটে ফেলেন। ফলে মূল ভাবের থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে পেতে সেই দূরত্ব হয়ে ওঠে অলঙ্ঘ্য।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।