তথাকথিত সৌন্দর্যের ব্যতিক্রম তিনি। খর্বাকৃতি, স্থূলকায় এক দেবতা যার মস্তক হাতির মতো। তবু সমস্ত পুজোর আগে করতে হয় তাঁরই পুজো। কেন জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক কোন মন্ত্রে তুষ্ট হন গজানন।
তিনি গৌরীপুত্র। আবার বিদ্যা-বুদ্ধির দৌড়ে দেবকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই। তাই গজাননের স্থান সবার আগে। যে-কোনও পুজো শুরু করার আগেই স্মরণ করতে হয় তাঁকে। তবে শুধুমাত্র তাঁকে উদ্দেশ্য করে যে পুজো, সারা দেশে সাড়ম্বরে পালন করা হয়, তা হল- গণেশ চতুর্থী। পুরাণ মতে এইদিনে ভক্তিভরে গণেশ পুজো করলে সংসার ভরে ওঠে সুখ সমৃদ্ধিতে। সাধারণত যে-কোনও দেবতারই ষোড়শপাচারে পুজো করলে সর্বাধিক প্রসন্ন হন। গজানন নিজেও এর ব্যতিক্রম নন। তবে প্রচলিত রীতি ছাড়াও আরও বহু প্রকারে গণেশ পূজা সম্পন্ন করা যেতে পারে।
আরও শুনুন: কৌশিকী অমাবস্যায় আবির্ভূত হন দেবী তারা, কী মাহাত্ম্য এই তিথির?
গৃহস্থ বাড়িতে তাঁর আরাধনা করার জন্য বিশেষ কোনও আড়ম্বর না করলেও চলে। বলা হয় গণেশের সব থেকে অপছন্দের বিষয় হল অহংকার। তাই কেউ ভক্তিভরে অহংশূন্য মনে তাঁর অর্চনা করলে অবশ্যই তুষ্ট হন গণেশ। স্বয়ং চন্দ্রদেব থেকে শুরু করে ধনপতি কুবের, সকলেই গণেশের সামনে নিজের অহংকার বির্সজন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। গণেশের লীলা কথনের সেইসব গল্পের বর্ণনা রয়েছে পুরাণেই। এমনকী তাঁর প্রিয় মিষ্টি কেন মোদক, সেই নিয়েই প্রচলিত রয়েছে এক কাহিনি। শোনা যায়, পুরাকালে মহাদেব সপরিবারে তাঁর এক ভক্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দেবী পার্বতী ও পুত্র গণেশ। খাবার পরিবেশনের সময় সেই ভক্ত মহেশ্বরকে বলেন গণেশের সম্পূর্ণ উদরপূর্তি করার পরেই তিনি মহাদেবের সেবা করতে আসবেন। একথা শুনে কেবলমাত্র একটি মিষ্টি খেয়েই ঢেঁকুর তোলেন গণপতি। তারপর মহাদেবও সেই মিষ্টি খেয়েই পরম তৃপ্তিতে ঘোষণা করেন তাঁর আহার সম্পূর্ণ হয়েছে। কী এমন মিষ্টি যা খেয়ে একইসঙ্গে মহাদেব ও গণেশের উদরপূর্তি হল? মাতা পার্বতী এমন প্রশ্ন করায় সেই ভক্ত তাঁকে জানান, মোদক নামের এই মিষ্টির কথা। তারপর থেকেই প্রিয় পুত্র গণেশের জন্য মোদক প্রস্তুত করতেন মাতা পার্বতী। ধীরে ধীরে মর্তবাসীর কাছেও গণেশের এই প্রিয় মিষ্টির কথা প্রচলিত হয়ে পড়ে।
আরও শুনুন: শিবভক্তির সামনে থমকে গিয়েছিলেন যমও, ঋষি মার্কণ্ডেয়র কাহিনি দেয় অমরত্বের সন্ধান
মোদকের পাশাপাশি গণেশ পছন্দ করেন দূর্বা ঘাস। তাই গণেশ মূর্তিতে পরানো হয় দূর্বা ঘাসের মালা। তাঁর পছন্দের রং হলুদ। তাই যে-কোনও হলুদ ফুলেই তুষ্ট হন গণপতি। এছাড়াও তাঁর পুজো করার ক্ষেত্রে আর একটি প্রয়োজনীয় উপাচার হল নারকেল। অনেকেই গণেশের উদ্দেশে ঘট স্থাপন করে তার উপর নারকেল রাখেন। গণেশের মূর্তি মানেই শুভ। যে-কোনও শুভ অনুষ্ঠানের সূচনাও তাঁকে স্মরণ করেই হয়। এমনকি বাড়ির প্রবেশদ্বারেও অনেকে গণেশের প্রতীকী রাখেন। সর্বোপরি গণেশ পুজোর শুভ দিনে তাঁর অর্চনা করাই সুখের বার্তা বয়ে আনে।