৫১ সতীপীঠের অন্যতম। তবে তন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কামরূপ কামাখ্যা। পুরাণমতে এই পীঠে দেবী সতীর যোনিঅংশ পতিত হয়েছিল। তবে শাস্ত্রে দেবি কামাখ্যার যে মূর্তির ব্যাখ্যা মেলে তা কোনও অংশেই যোনি স্বরূপ নয়। কী মাহাত্ম্য দেবীর সেই মূর্তির? আসুন শুনে নিই।
কামাখ্যা মন্দির ঘিরে রহস্যের অন্ত নেই। অম্বুবাচীর সময় ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হওয়া থেকে আরম্ভ করে মন্দিরের দরজা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়া। সব কিছুর নেপথ্যেই অলৌকিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই। সেইসঙ্গে অনেকেরই ধারণা দেবি কামাখ্যার মূর্তি যোনিস্বরূপ। দেবী সতীর যোনি অংশ এখানে পতিত হওয়ার কারণেই এমন ধারণা পোষণ করেন অনেকেই।
আরও শুনুন: লাল হয় ব্রহ্মপুত্রের জল, অম্বুবাচীতে মহামায়ার যোনিপূজা ঘিরে আর কী রহস্য রয়েছে?
কিন্তু শাস্ত্রমতে তা আদৌ সত্যি নয়। বরং দেবী কামাখ্যার এমন এক রূপের ব্যাখ্যা দেয় শাস্ত্র, যা সাধারণ দেবী মূর্তি তুলনায় অনেকটাই আলাদা। ধ্যানমন্ত্র অনুসারে দেবী ঘনকৃষ্ণবর্ণা। এলোকেশী। ধড় একটিই তবে মাথার সংখ্যা ছয়। পাঁচটি শির পাশাপাশি, এবং একটি তার উপর শায়িত। সবেই ত্রিনেত্র বিদ্যমান, মোট আঠারোটি চোখ রয়েছে এই দেবীর। হাতের সংখ্যা বারো। প্রত্যেক হাতেই আলাদা আলাদা অস্ত্র। ডানদিকের হাতগুলিতে রয়েছে পুস্তক, পঞ্চবাণ, খড়গ, শক্তিযন্ত্র, মুদ্রা ও শূল। বামদিকের হাতগুলোতে শোভা পাচ্ছে অক্ষমালা, পদ্ম, কোদণ্ড, অভয়মুদ্রা, ঢাল ও ধনুক। যদিও তন্ত্রমতে দেবীর রূপের খানিক আলাদা বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া দেবীর ছটি মস্তকেরও আলাদা বর্ণের উল্লেখ মেলে। সেক্ষেত্রে বামদিক থেকে শ্বেত বর্ণের মাহেশ্বরী, লাল বর্ণের কামাখ্যা, হলুদ ত্রিপুরসুন্দরী, সবুজ সারদা কালো কামেশ্বরী ও বিচিত্রবর্ণা চণ্ডী। সিংহের উপর দেবীর অধিষ্ঠান। দেবী শুধুমাত্র সিংহ নয়। সেখানেও রয়েছে ব্যতিক্রম। সিংহের পিঠের উপর শায়িত রয়েছে মহাদেব। তাঁর বামহাত মাথার নীচে এবং ডানহাত একপাশে ঝুলন্ত। সেই শয়নরত মহেশ্বরের নাভি থেকেই একটি পদ্ম উঠেছে। যার উপর দেবী মহামায়ার এই বিশেষ রূপ অধিষ্ঠিতা। দেবী জগদ্ধাত্রীর মতো ইনিও এক পা কোলের উপর এবং অন্য পা বাইরে ঝুলিয়ে রেখেছেন। এখানেই মূর্তিটি সম্পূর্ণ নয়। দু-পাশে রয়েছে দুটি পদ্ম। যার উপর শ্রী বিষ্ণু এবং ব্রহ্মা অবস্থান করছেন। দেবঈর গলায় জবাফুলের মালা। শরীরে জড়ানো রয়েছে ব্যাঘ্রচর্ম। শাস্ত্রমতে মানুষের ভোগ, লালসা, কামনা সবই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন।
আরও শুনুন: কামাখ্যার অম্বুবাচী মেলায় সমাগম বহু ভক্তের, কী রহস্য এই মেলাকে ঘিরে?
আসলে এই রূপের নেপথ্যে অন্য এক কাহিনির ব্যাখ্যা মেলে পুরাণে। মনে করা হয়, দেবী সতীর দেহ বহুখণ্ডে বিভক্ত হওয়ার পরেও সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেননি মহাদেব। তাই কামাখ্যা পীঠের মহামুদ্রাস্থলে দেবী কামার্থমাগতা। এই বিশেষ রূপেই দেবীর সঙ্গে নিত্য বিলাসরত দেবাদিদেব। এ রূপের মাহাত্ম্য অত্যন্ত গূঢ়। কোনও ভোগী পুরুষের পক্ষে এর অর্থ অনুধাবন অসম্ভব। তাই দেবীর আরাধনা পদ্ধতিও গুপ্ত। তন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী না হলে দেবীর এই রূপের পুজো করা অসম্ভব। জীবের সমস্ত কামনা পরিতৃপ্ত করেন বলেই তিনি কামদা। মানুষের মনে শুদ্ধ সৃষ্টির যে বাসনা, তারই উৎস তিনি। তাই মন থেকে দেবীর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই ফল মেলে।