যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের উদার অমৃতকথা আমাদের পৌঁছে দেয় জীবনের সার্থকতায়। ঈশ্বরে মন রেখেই সাংসারিক কর্তব্যপালনের যে অমোঘ পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাই-ই আজও আমাদের পাথেয়। সেই কথাই উঠে এসেছে সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরমপদকমলে’ গ্রন্থে। আসুন শুনে নিই সেই অমৃতপ্রসঙ্গ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: উদ্বোধন কার্যালয়
যারা সংসারে বদ্ধ, তাদের মনের ভিতর জেগে থাকে প্রবল বিষয়বাসনা। বিষয়ই তাদের ভালো লাগে, ধর্মকথা ভালো লাগে না। সেই ভালো লাগানোটাই সাধনা। সেই সাধনায় পৌঁছনোর উপায় বুঝিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস।
আরও শুনুন: পরমপদকমলে: পূজার দেখনদারি নয়, মনের ঘরে প্রার্থনায় জোর দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
ঠাকুরের সেই দর্শন খুব প্রাঞ্জল ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিখ্যাত বই ‘পরমপদকমলে’-তে ‘সাধনা’ শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন,
ঠাকুর বলছেন : “দু-রকম মাছি আছে—একরকম মধু মাছি, তারা মধু ভিন্ন আর কিছুই খায় না। আরেক রকম মাছি মধুতেও বসে, আর যদি পচা ঘা পায়। তখনি মধু ফেলে পচা ঘায়ে গিয়ে বসে। সেই রকম দুই প্রকৃতির লোক আছে— যারা ঈশ্বরানুরাগী, তারা ভগবানের কথা ছাড়া অন্য প্রসঙ্গ করতেই পারে না। আর যারা সংসারাসক্ত জীব, তারা ঈশ্বরীয় কথা শুনতে শুনতে যদি কেহ কাম-কাঞ্চনের কথা কয়, তাহলে ঈশ্বরীয় কথা ফেলে তখনই তাতে মত্ত হয়।”
মাছি আর মৌমাছি— এই হলো জীবের উপমা। প্রথমে চাই বিবেক-বৈরাগ্য । আমার ভাল লাগছে না। সমস্ত কিছু মনে হচ্ছে বিস্বাদ আর আলুনি। ঠাকুর বলছেন : “বিষয়ে বিতৃষ্ণার নাম বৈরাগ্য।” বলছেন : “বিবেক-বৈরাগ্য না থাকলে শাস্ত্র পড়া মিছে। বিবেক-বৈরাগ্য ছাড়া ধর্মলাভও হয় না। এইটি সৎ আর এইটি অসৎ বিচার করে সদ্বস্তু গ্রহণ করা, আর দেহ আলাদা আর আত্মা আলাদা- এইরূপ বিচার-বুদ্ধির নাম বিবেক।”