যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের উদার অমৃতকথা আমাদের পৌঁছে দেয় জীবনের সার্থকতায়। ঈশ্বরে মন রেখেই সাংসারিক কর্তব্যপালনের যে অমোঘ পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাই-ই আজও আমাদের পাথেয়। সেই কথাই উঠে এসেছে সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরমপদকমলে’ গ্রন্থে। আসুন শুনে নিই সেই অমৃতপ্রসঙ্গ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: উদ্বোধন কার্যালয়
ঠাকুর সাধক মানুষ। আবার একই সঙ্গে তিনি পরিবারেরও অংশ। বিবাহ করেছেন। স্ত্রী আছে। সন্ন্যাস আর সংসারকে ঠাকুর যে সমন্বয়ে বেঁধেছিলেন তার তুলনা মেলা ভার। ঠাকুরের সেই দর্শন খুব প্রাঞ্জল ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিখ্যাত বই ‘পরমপদকমলে’-তে ‘অংশে অংশে মিলে পূর্ণ’ শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন,
আরও শুনুন: পরমপদকমলে: পূজার দেখনদারি নয়, মনের ঘরে প্রার্থনায় জোর দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
সেই রাতের সেই দিব্যঘটনা। সারদা ঠাকুরের পাশে একই শয্যায় নিদ্রিতা। ‘ধর্মবিজ্ঞানী, অতিসাহসী গবেষক রামকৃষ্ণ নিজের মনকে বসালেন বিচারে-
“মন ইহারই নাম স্ত্রীশরীর, লোকে ইহাকে পরম উপাদেয় ভোগ্যবস্তু বলিয়া জানে এবং ভোগ করিবার জন্য সর্বক্ষণ লালায়িত হয়; কিন্তু উহা গ্রহণ করিলে দেহেই আবদ্ধ থাকিতে হয়; সচ্চিদানন্দ ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না; ভাবের ঘরে চুরি করিও না, পেটে একখানা মুখে একখানা রাখিও না, সত্য বল, তুমি উহা গ্রহণ করিতে চাও অথবা ঈশ্বরকে চাও ? যদি উহা চাও তো এই তোমার সম্মুখে রহিয়াছে গ্রহণ কর।”
ঠাকুর যেই হাত বাড়াতে গেলেন, অমনি গভীর সমাধি। ঠাকুর বলেছেনঃ “ও যদি এত ভাল না হতো, আত্মহারা হয়ে তখন আমাকে আক্রমণ করত, তাহলে সংযমের বাঁধ ভেঙে দেহবুদ্ধি আসত কিনা কে বলতে পারে। বিবাহের পর মাকে ব্যাকুল হয়ে ধরেছিলাম, মা আমার পত্নীর ভিতর থেকে কামভাব এককালে দূর করে দে। মা সেকথা সত্য সত্যই শুনেছিলেন। ”
ফলহারিণী-কালীপূজার সেই রাত। ঠাকুরের সেই ঘর। আলিম্পনভূষিত দেবীর পীঠে শ্রীসারদা অর্ধবাহ্যদশায় সমাসীনা। কলসের মন্ত্রপূত বারি, বারে বারে সিঞ্চিত হলো তাঁর অঙ্গে। তাঁকে অভিষিক্ত করে, মন্ত্র শ্রবণ করিয়ে প্রার্থনা মন্ত্র উচ্চারণ করলেন ঠাকুর-
“হে বালে, হে সর্বশক্তির অধীশ্বরী মাতঃ ত্রিপুরসুন্দরী সিদ্ধিদ্বার উন্মুক্ত কর ইহার শরীরমনকে পবিত্র করিয়া ইহাতে আবির্ভূতা হইয়া সর্বকল্যাণ সাধন কর।”