যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের উদার অমৃতকথা আমাদের পৌঁছে দেয় জীবনের সার্থকতায়। ঈশ্বরে মন রেখেই সাংসারিক কর্তব্যপালনের যে অমোঘ পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাই-ই আজও আমাদের পাথেয়। সেই কথাই উঠে এসেছে সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরমপদকমলে’ গ্রন্থে। আসুন শুনে নিই সেই অমৃতপ্রসঙ্গ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: উদ্বোধন কার্যালয়
জীবনের অরণ্যে ‘আমি’ হারিয়ে যায়। অর্থাৎ আমার যে আমি, যা আমার স্বরূপ, সেই অন্তর্নিহিত সত্য। আসলে সংসার আর সংসারের নানা কিছু নিয়ে জীবন নেশায় মেতে ওঠে। নিত্য আর অনিত্যের জ্ঞান ছাড়াই চলে অন্তহীন দৌড়। আর সেই দৌড়ের ঝোঁকেই আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে যায় প্রকৃত জীবন। সেই দিকে ইঙ্গিত করেই শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “কুব্জা তোমায় কু বুঝায়। রাইপক্ষে বুঝায় এমন কেউ নেই।”
আরও শুনুন: পরমপদকমলে: পরমানন্দকে মন দিয়ে স্পর্শ করতে হয়, শিখিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণই
ঠাকুরের সেই দর্শন খুব প্রাঞ্জল ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিখ্যাত বই ‘পরমপদকমলে’-তে ‘হাসছে কেমন!’ শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন,
পিঠচাপড়ানিটুকুর লোভেই মানুষ যৌবনে মেতে থাকে; তারপর হঠাৎ একদিন নেশার খোঁয়াড়ি ভাঙে। তখন মনে হতে থাকে- যাঃ, আর তো সময় নেই। সেই হাত কোথায়। সেই নিশ্চিন্ততার হাত! সেই অমোঘ বন্ধনে জড়িয়ে ধরার হাত। তিনি পাশেই থাকেন, কাছেই থাকেন। অসীম তাঁর ধৈর্য, অনন্ত তাঁর অপেক্ষা। তিনি আগেই টানেন না, অপেক্ষা করে থাকেন, নজর রাখেন। সুপুরিগাছের বালদো কাঁচায় টানলে লাগবে। আগে শুকোক, তারপর আপনিই খুলে পড়ে যাবে। একজন্ম, দুজন্ম, শতজন্ম- বাসনা না ফুরোলে অনর্থক ভণ্ডামি। সে ওই ওইরকম, স্নান সেরে, ভিজে কাপড়ে এক গোছা ধূপ জ্বালিয়ে খুব হাত ঘোরানো। সেই হাত ঘোরালে নাড়ু পাবে, না ঘোরালে কোথায় পাবে! এ তো হাত ঘোরাবার ব্যাপার নয়, ব্যাপারটা তো মন ঘোরাবার ।