যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের উদার অমৃতকথা আমাদের পৌঁছে দেয় জীবনের সার্থকতায়। ঈশ্বরে মন রেখেই সাংসারিক কর্তব্যপালনের যে অমোঘ পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাই-ই আজও আমাদের পাথেয়। সেই কথাই উঠে এসেছে সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরমপদকমলে’ গ্রন্থে। আসুন শুনে নিই সেই অমৃতপ্রসঙ্গ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: উদ্বোধন কার্যালয়
সংসারে থেকেও ঈশ্বরে অবিচল ভক্তি রাখা যায়। গৃহীরা সর্বক্ষণ যে প্রশ্ন, যে সংশয় নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারই যেন সমাধানের পথ বাতলে দিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ। একদিকে তো তিনি ভারতীয় অধ্যাত্মসাধনাকে গণমানুষের সঙ্গে যোগ করলেন। তাঁর সন্ন্যাসী ভক্তরা দিকে দিকে জ্বালিয়ে দিলেন সাধনার চিরায়ত তবু নতুন আলোকবর্তিকা। অন্যদিকে গৃহীর সাধনার পথের খোঁজও দিয়ে দিলেন তিনি।
আরও শুনুন: পরমপদকমলে: পরমানন্দকে মন দিয়ে স্পর্শ করতে হয়, শিখিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণই
খুব প্রাঞ্জল ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিখ্যাত বই ‘পরমপদকমলে’-তে ‘গৃহীর ঠাকুর রামকৃষ্ণ’ শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন,
ঠাকুর আরো উপদেশ দিলেন : “তেল হাতে মেখে তবে কাঠাল ভাঙতে হয়। তা নাহলে হাতে আঠা জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরে ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়। কিন্তু এই ভক্তি লাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা। সংসার জল আর মনটি যেন দুধ। যদি জলে ফেলে রাখ, তাহলে দুধে-জলে মিশে এক হয়ে যায়, খাঁটি দুধ খুঁজে পাওয়া যায় না। দুধকে দই পেতে মাখন তুলে যদি জলে ফেলে রাখা যায়, তাহলে ভাসে। তাই নির্জনে সাধন দ্বারা আগে জ্ঞান- ভক্তিরূপ মাখন লাভ করবে। সেই মাখন সংসার-জলে ফেলে রাখলেও মিশবে না; ভেসে থাকবে।”