জীব মাত্রেই ঈশ্বরের বাস। তবে শাস্ত্র বলে, শুধু জীব কেন! ঈশ্বরের বাস তো জগতের সর্বত্রই। বাদ নেই উদ্ভিদ জগতও। হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে এমন কিছু উদ্ভিদের, যেগুলিকে ঈশ্বরের সঙ্গেই তুলনা করা হয়। তাই অনেকেই এই বিশেষ গাছগুলির পুজো করে থাকেন। কোন গাছের পুজো করলে কোন দেবতা তুষ্ট হন? আসুন শুনে নিই।
তুলসী, কলা কিংবা অশ্বত্থ। হিন্দু মন্দিরে এই ধরনের গাছের দেখা পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। শুধু দেখা পাওয়া নয়, এই গাছগুলিকে রীতিমতো ভক্তিভরে পুজো করার রেওয়াজও রয়েছে। কারণ শাস্ত্রমতে এগুলির মধ্যে স্বয়ং ঈশ্বরের বাস। তাই নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট গাছের পুজো করলেও বিশেষ ফল মেলে।
আরও শুনুন: বৌদ্ধ ধর্মের আলোর উৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমায় বিশেষ কিছু নিয়ম পালনে নিশ্চিত ফল মেলে
প্রথমেই বলতে হয় তুলসী গাছের কথা। শ্রীরনারায়নের অতি প্রিয় এই গাছের পাতা। বিশেষ এক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে সেই প্রসঙ্গে। তবে যে কোনও কৃষ্ণ মন্দিরে তুলসী গাছ রাখা বাঞ্ছনীয়। মনে করা হয় ভক্তিভরে তুলসী আরাধনা করলে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবার এই গাছের ভেষজ গুণও অপিরিসীম। তাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এর যথেষ্ট কদর করা হয়। এরপর বলতে হয় কলা গাছের কথা। যেকোনও শুভকাজে এই গাছ ব্যবহার করা হয়। এতেই নাকি সংসারে শ্রী বৃদ্ধি হয়। একইসঙ্গে নিয়ম করে প্রতি বৃহস্পতিবার কলাগাছে জল দিলে বৈষয়িক উন্নতি সম্ভব। এবার আসা যাক অশ্বত্থ গাছের প্রসঙ্গে। এমন অনেক মন্দির রয়েছে যেখানে এই গাছের বেদি দেখা যায়। যেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে রীতিমতো পুজো করতেও দেখা যায় অনেককেই। আসলে এই অশ্বত্থ গাছে হিন্দু ধর্মের তিন প্রধান দেবতাই বাস করেন বলে মনে করা হয়। গাছটির মূলে ভগবান ব্রহ্মা, কাণ্ড বা মাঝের অংশে ভগবান বিষ্ণু, এই গাছের ঊর্ধাংশে ভগবান শিবের বাস। তাই অনেক ক্ষেত্রেই অশ্বত্থ গাছের নীচে শিবের মন্দির দেখা যায়। একইভাবে অনেকে বটগাছেরও পুজো করে থাকেন। শাস্ত্রমতে এই গাছ একইসঙ্গে দেবতা ও পূর্বপুরুষদের বাসস্থান। অনেকে আবার মনে করেন বট গাছ স্বয়ং শিবের অংশ। তাই এই গাছে জল দেওয়া বিশেষ ভাবে ফলদায়ক। যদিও এই দুই গাছের পাতা বা ফল পুজোর কোনও কাজে লাগে না। বরং শিবপুজোয় ব্যবহার করা হয় বেলগাছের পাতা। তাই এই গাছকেও শিবজ্ঞানে পুজো করেন অনেকেই। ভক্তিভরে রোজ বেলগাছে জল ঢাললে গ্রহের দোষ কেটে যেতে পারে। জ্যোতিষীরাও বিশেষ ক্ষেত্রে এমন বিধান দিয়ে থাকেন। এখানেই শেষ নয়। তালিকায় এরপরেই রয়েছে আমলকি গাছ। শাস্ত্রমতে এই গাছেও বাস করেন শ্রী বিষ্ণু। একাদশী তিথিতে আমলকি গাছে জল ঢাললে নারায়ণ অতন্ত্য প্রীত হন। তাই এই কাজ যারা করেন তাঁদের জীবন সুখে সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। এরপর বলতে হয় কদম গাছের কথা। এমনিতেই এই গাছের ফুল খুবই আকর্ষনীয়। শাস্ত্রমতে এর মধ্যে স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী বিরাজমানা। শুভকাজে যাওয়ার আগে কদমফুলের গাছ দর্শন করলেও বিশেষ ফল মেলে। তাই অনেকে প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম করে এই গাছের পুজো করেন।
আরও শুনুন: স্বয়ং মহামায়ার অংশ, দেবী গন্ধেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়েই ব্যবসা শুরু গন্ধবণিক গোষ্ঠীর
এছাড়াও শাস্ত্রে দূর্বা ঘাসের উল্লেখও বিশেষভাবে পাওয়া যায়। যে কোনও পুজোতেই এই দূর্বাঘাস দিয়ে অর্ঘ্য দিতে হয়। সেও তো একপ্রকার উদ্ভিদ। সব মিলিয়ে বলা যায়, শাস্ত্রমতে যেখানেই প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে সেখানেই ভগবানের বাস। তাই জীব সেবার পাশাপাশি উদ্ভিদ জগতের যত্ন নিলেও ইশ্বর লাভ সম্ভব। জীবনের সার্বিক উন্নতি, মনের শান্তি সব কিছুই অনায়াসে মিলতে পারে এই বিশেষ কাজ গুলি করলে।