হিন্দুধর্মের অতি পবিত্র তিথি একাদশী। শাস্ত্রমতে এইদিন নিরম্বু উপবাস পালন করতে হয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই “একাদশী উপবাসের” প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। বিষ্ণুর শয়ন, পার্শ্ব পরিবর্তন ও উত্থান উপলক্ষে আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভ বলে গণ্য হয়। তবে বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে অপরা, নির্জলা, যোগিনী, পদ্মিনী, শয়নী এবং প্রবোধনী একাদশীরও। ঠিক কী নিয়ম পালন করতে হয় এইদিন? আসুন শুনে নিই।
জগতের পালনকর্তা শ্রী বিষ্ণু। তাঁর সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত একাদশী ব্রত। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষজন ভক্তিভরে মাসে দুবার একাদশী পালন করেন। তবে শুধুমাত্র বৈষ্ণব নন, একাদশী ব্রত পালনে উপকৃত হতে পারেন যে কেউ। সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মানলেই বিশেষ সৌভাগ্য লাভ হতে পারে।
আরও শুনুন: গঙ্গাস্নানে মেলে দশজন্মের পাপ থেকে মুক্তি! দশহরাতে কেন হয় গঙ্গার পুজো?
নারায়ণ পুজোয় তুলসী আবশ্যক। তাই একাদশী তিথিতে তুলসী পুজো করলে বিশেষ ফল মেলে। অনেক এইদিন কিচ্ছুটি দাঁতে কাটেন না। শাস্ত্রে একাদশী ব্রত পালনে সে নিয়ম অবশ্যই রয়েছে, তবে তুলসী পুজো করলেও উপবাসের মতোই ফল মেলে। সকালে স্নান সেরে ভক্তিভরে তুলসী দেবীকে স্মরণ করতে হয়। তারপর শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে তুলসী মঞ্চ পরিষ্কার করে রাখতে হয়। এরপর আয়োজন করতে হয় তুলসী পুজোর। বিশেষ কোনও আচার নেই। স্রেফ মনের ভক্তিই যথেষ্ট। সাধ্যমতো ফল-মিষ্টি সাজিয়ে ধূপ জ্বালতে হয়। তারপর তুলসী প্রদক্ষিণ করার নিয়ম রয়েছে। এইসময় অনেকেই করতালি সহযোগে হরিনাম করেন। একাদশীর দিন যা বিশেষ ফলদায়ক। এরপর শুদ্ধচিত্তে ওই স্থানে আরও কিছুক্ষণ সময় কাটাতে হয়। মনে রাখতে হবে, আত্মাই দেহের সারকথা। তাই আত্মাকে কষ্ট দিয়ে কোনও কাজ করা উচিত নয়। পুজোর পর কেউ যদি মনে করেন কিছু না খেলেই নয়, তিনি অবশ্যই প্রসাদ মুখে দিতে পারেন। বিশেষত যাঁদের না খেয়ে থাকার অভ্যাস নেই, তাঁরা অবশ্যই পুজোর শেষে কিছু খেয়ে নিন। শুধু সেই খাবার যেন বিষ্ণুকে নিবেদন করার পরই মুখে দেওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনওরূপ আমিষ দ্রব্য এদিন ভক্ষণ করতে নেই। অনেকে চাল জাতীয় দ্রব্যও গ্রহণ করেন না। তবে শস্যজাতীয় খাদ্যে কোনও অসুবিধা নেই। দুধ বা দুধজাতীয় খাবারও খাওয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই মাথায় রাখতে হবে আত্মার শুদ্ধিকরণের কথা। মন শুদ্ধ না থাকলে কোনও ব্রতের ফল মেলে না।
আরও শুনুন: Spiritual: শাস্ত্রমতে কেন একাদশী গুরুত্বপূর্ণ তিথি?
শুধু এই নির্জলা একাদশীই নয় অন্যান্য একাদশীতেও এই একই নিয়ম পালন করা যেতে পারে। তবে যারা একাদশী ব্রত নিয়মিত পালন করেন তাঁরা নিজেদের সুবিধামতো নিরম্বু উপবাস রাখতেই পারেন। আবার অনেকে মনে করেন কলিযুগে উপবাস নিষিদ্ধ। তাই সেই যুক্তি মানলেও কোনও ক্ষতি নেই। স্রেফ মাথায় রাখতে হবে ঈশ্বরচিন্তার প্রসঙ্গটি। কোনওভাবেই একাদশীর দিনে দুষ্ট চিন্তা মাথায় আনা উচিৎ নয়। কাউকে ঠকানো কিংবা কিছু চুরি করা ভয়ংকর অপরাধ। ভুল করেও একাদশী ব্রত পালনের সঙ্গে এই কাজ করবেন না। এতে ফল বিপরীত হতে পারে। ভুলবশত কোনও অপরাধ করে ফেললে, তুলসীর সামনে আত্মসমর্পণ করুন। এতেই দেহ মন সব পরিশুদ্ধ হতে বাধ্য।