কেউ তাঁকে বলেন লম্বোদর। কেউ বলেন বিনায়ক। সিদ্ধিদাতা হিসেবেই গণেশের পুজো করেন সকল মানুষ। তাঁর পুজো করা মানেই সকল বিঘ্নের অবসান। আর তাই গণেশ চতুর্থীতে বিঘ্নহর্তা গণেশের আরাধনা চলে দেশ জুড়ে। স্রেফ মন্দির বা মণ্ডপ নয়, বাড়িতেও অনেকেই গনেশ পুজোর ব্যবস্থা করেন। সেক্ষেত্রে মূর্তি নির্বাচনের সময় কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন? আসুন শুনে নিই।
তিনি সিদ্ধিদাতা। বিঘ্ননাশ করেন তিনি। তাই সুখ, সমৃদ্ধির কামনায় তাঁর পুজো করেন সাধারণ মানুষ। সকল দেবদেবীর মধ্যে লম্বোদর বিনায়কের পুজোই করা হয় সবার আগে। তাঁর মূর্তিও মানব জীবনের নানা গুণের প্রতীক। সহনশীলতা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা ইত্যাদির প্রতীক হয়েই আছে গণপতির মূর্তি। গণপতির আরাধনা তাই নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু বিশ্বাস মতে গণেশ চতুর্থীই আসলে গণেশের জন্মতিথি। তাই এই দিন সারা দেশেই সাড়ম্বরে গণেশ আরাধনার আয়োজন করা হয়।
আরও শুনুন: রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় দেশ জুড়ে জ্বলবে প্রদীপ, ৫ লক্ষ গ্রামে শৌর্য যাত্রার আয়োজন বজরং দলের
মূলত মহারাষ্ট্র সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন এলাকা গনেশ আরাধনার জন্য প্রসিদ্ধ। তবে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এই পুজোর চল শুরু হয়েছে। বাড়িতেও গনেশ আরাধনার ব্যবস্থা করেন অনেকেই। তবে বাড়িতে একবার গনেশপুজো শুরু করলে অন্তত তিনবছর তা করতে হয়। কেউ কেউ চাইলে তার পরও করতেই পারেন। গৃহস্থ বাড়িতে তাঁর আরাধনা করার জন্য বিশেষ কোনও আড়ম্বর না করলেও চলে। বলা হয় গণেশের সব থেকে অপছন্দের বিষয় হল অহংকার। তাই কেউ ভক্তিভরে অহংশূন্য মনে তাঁর অর্চনা করলে অবশ্যই তুষ্ট হন গণেশ। স্বয়ং চন্দ্রদেব থেকে শুরু করে ধনপতি কুবের, সকলেই গণেশের সামনে নিজের অহংকার বির্সজন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। গণেশের লীলা কথনের সেইসব গল্পের বর্ণনা রয়েছে পুরাণেই। যে কোনও মিষ্টি দ্রব্যই গণেশের অতি পছন্দের। তবে লাড্ডু বা মোদক ভোগ হিসেবে দিলে বিশেষ তুষ্ট হন গণপতি। মোদকের পাশাপাশি গণেশ পছন্দ করেন দূর্বা ঘাস। তাই গণেশ মূর্তিতে পরানো হয় দূর্বা ঘাসের মালা। তাঁর পছন্দের রং হলুদ। এছাড়াও তাঁর পুজো করার ক্ষেত্রে আর একটি প্রয়োজনীয় উপাচার হল নারকেল। অনেকেই গণেশের উদ্দেশে ঘট স্থাপন করে তার উপর নারকেল রাখেন।
আরও শুনুন: একটি লাড্ডুর দাম ২৪ লক্ষ টাকা! গণেশ পুজোর ‘বিরল’ প্রসাদ ঘিরে শোরগোল হায়দরাবাদে
এবার আসা যাক মূর্তির প্রসঙ্গে। গণেশের মূর্তি মানেই শুভ। যে-কোনও শুভ অনুষ্ঠানের সূচনাও তাঁকে স্মরণ করেই হয়। এমনকি বাড়ির প্রবেশদ্বারেও অনেকে গণেশের প্রতীকী রাখেন। গণপতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগবেদে। যদিও সেই গণপতি আর বর্তমানে যেভাবে গণেশ পুজো হয়, তার মধ্যে থেকে গিয়েছে অনেকটা সময়। ফলে, বহু পরিবর্তন বা বিবর্তন হয়েছে এর ভিতর। গণেশের জন্মকথা ও মূর্তির বিশেষত্ব নিয়েও নানা পৌরাণিক আখ্যান ছড়িয়ে আছে। তাই গণেশের বিভিন্ন ধরনের মূর্তি দেখা। কোথাও গণেশের শুঁড় ডানদিকে, আবার কোথাও বামদিকে। দুই মূর্তির বিশেষত্বও আলাদা। বাস্তু শাত্রমতে, গৃহস্থ বাড়ির জন্য ডানদিকে শুঁড়যুক্ত গণেশ বিশেষ ফলদায়ক। আবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে মূর্তির শুঁড় বামদিকে হওয়া উচিত। এই মূর্তি ধনদায়ক। এছাড়া মূর্তির রং নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। বিভিন্ন মন্দিরে সম্পূর্ণ লাল রঙের গণেশ মূর্তি দেখা যায়। বাড়িতে এই ধরনের মূর্তি না আনাই ভালো। বাড়ি বা অফিসে সাধারণ রঙের যে গণেশ মূর্তি হয় তা পুজো করাই বাঞ্ছনীয়। এছাড়া পঞ্চমুখ গনেশের মূর্তিও দেখা যায়। এমনিতে সেই মূর্তি আনা যেতেই পারে। তবে গনেশ চতুর্থির দিনে যে পঞ্চমুখ গণেশের পুজো করা উচিত নয়। সেই মূর্তি হবে সাধারণ। মূর্তিতে অবশ্যই যেন প্রভুর বাহন মুষিক থাকে, তা দেখা নিতে হবে। এছাড়া কোনও খুঁত যেন মূর্তিতে না থাকে সে দিকেও নজর রাখা একান্ত প্রয়োজন। এইসব সাধারণ নিয়ম মেনে গণেশ পুজোর ব্যবস্থা করলে সংসারের সব বাধা বিপত্তি কেটে যায়। সিদ্ধিদাতার আশীর্বাদে সুখের বার্তা নেমে আসে সকলের জীবনে।