তিনি কালের নিয়ন্ত্রণকারী, প্রলয়ঙ্করী কালী। প্রতি অমাবস্যায় তাঁর বিভিন্ন রূপের অর্চনা করেন ভক্তবৃন্দ। যার মধ্যে দেবীর বরাভয় রূপের পুজোর জন্য নির্দিষ্ট ফলহারিণী অমাবস্যা। শাস্ত্রমতে এইদিন ভক্তিভরে দেবীর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে, নিশ্চিত ফল মেলে। একইসঙ্গে এই তিথির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার প্রসঙ্গও। কোন কোন বিশেষ নিয়ম পালন করতে হয় এই অমাবস্যায়? আসুন শুনে নিই।
চতুর্ভুজা দিগম্বরী দেবী। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, এলোকেশী, ভীষণরূপা। অথচ তাঁর কাছেই জগতের সমস্ত শান্তি বিরাজ করে। তিনিই মাতৃস্বরূপা দেবী কালী। ভক্তের প্রতি তাঁর আশীর্বাদ সর্বদা বর্ষিত হয়। তবু নির্দিষ্ট এক তিথিতে দেবীর আরাধনা করলে অবশ্যই বিশেষ ফল মেলে। আর সেই তিথিই হল ফলহারিণী অমাবস্যা তিথি।
আরও শুনুন: পৌষ মাসে মুলো দিয়ে মা কালীর পুজো দেওয়া হয়, নেপথ্যে কোন কারণ?
অন্যান্য অমাবস্যাগুলির মতো এই তিথিরও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। কথিত আছে এইদিন স্বয়ং দেবী ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করার জন্য ধরাধামে অবতীর্ণ হন। যদিও ভক্তের চোখে তিনি সদা বিরাজমানা। তাঁর প্রকাশ সর্বত্রই। তবু ফলহারিণী অমাবস্যায় বিশেষ কিছু নিয়ম পালনের নিয়ম রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী কালীপুজো হয়। এইদিন দেবীকে বিভিন্ন মরশুমি ফল দিয়ে পুজো দিতে হয়। তারাপীঠ-সহ একাধিক মাতৃপীঠে এইদিন মায়ের মূর্তি ফুলের বদলে ফল দিয়ে সাজানো হয়। আম,জাম,কলা,লিচু ইত্যাদি বিভিন্ন ফলের মালা তৈরি করে দেবীকে পরানোর রেওয়াজ রয়েছে। কোনও ভক্ত যদি ফলহারিণী পুজোর দিন এমনটা করেন, তাহলে তাঁর জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। তবে এইসব নিয়ম সাধারণ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জ্যোতিষমতে ফলহারিণী পুজোর দিন বিশেষ একটি নিয়ম মানলে ব্যক্তিগত অভীষ্ট সিদ্ধি সম্ভব। খুব কঠিন কিছু নয়। স্রেফ একটি মরশুমি ফল দিয়ে প্রথমে দেবীর পুজো দিতে হবে। তারপর দেবীকে পুস্পাঞ্জলি দিয়ে নিজের মনের কথা জানাতে হবে। পুজো শেষে নির্দিষ্ট ফলটি বাড়িতে এনে রেখে দিতে হবে। কোনও ভাবেই ওই ফল খাওয়া যাবে না। এমনকি আগামী এক বছর ওই বিশেষ ফল খেতে পারবেন না ব্রতী। যদি এক বছরের মধ্যেই নিজের মনস্কামনা পূরণ হয় তাহলে প্রসাদী ফলটিকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে হবে। তারপর মায়ের পুজো দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে ওই ফল খাওয়া যেতে পারে। বলা বাহুল্য, ফলহারিণী পুজোর দিন এই বিশেষ নিয়ম পালন করলে অবশ্যই ফল মেলে।
আরও শুনুন: মা কালীর বিশেষ কয়েকটি রূপের পুজো করেন না গৃহস্থরা, নেপথ্যে শাস্ত্রের কোন কারণ?
আসলে দেবীর এই বিশেষ রূপ ভক্তের মনের ইচ্ছা পূরণের জন্যই। তাই দেবীকে ভক্তিভরে পুজো করলে ফল মিলবেই। একইসঙ্গে এই বিশেষ দিনেই শ্রী রামকৃষ্ণ, মা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন। দেবীর আসনে স্ত্রীকে বসিয়ে আরাধনা করেছিলেন তিনি। তাই এইদিন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরেও বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। একইসঙ্গে অনেক জায়গায় এইদিন ঘটা করে দেবী আরাধনার আয়োজন করা হয়। সব ক্ষেত্রেই দেবীর নৈবেদ্য সাজানো হয় মরশুমি ফল দিয়ে। আর এতেই অত্যন্ত প্রীত হন দেবী কালী।