সাধারণ এক ঘাস, অথচ তাকে ছাড়া যে কোনও পুজোই অসম্ভব বলা চলে। সঙ্কল্প করা থেকে আরম্ভ করে যজ্ঞাহুতি, সব কাজেই প্রয়োজন হয় দূর্বার। আবার পার্বতীপুত্র গণেশের ভীষণ প্রিয় এই ঘাস। কিন্তু জানেন কী, এই দূর্বা আসলে এক অসুর? তাহলে দেবপুজোয় কীভাবে এতটা আবশ্যক হয়ে উঠল সে? আসুন শুনে নিই।
হিন্দু দেবদেবীর পুজোয় অবশ্যই প্রয়োজন দূর্বা ঘাস। সরু ও তীক্ষ্ণ ডগা বিশিষ্ট এই বিশেষ ঘাস ব্যবহার করা হয় যে কোনও পবিত্র অনুষ্ঠানে। কাউকে আশীর্বাদ করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় ধান ও দূর্বা। কিন্তু হিন্দুদের পুজোয় এই ঘাসের এত প্রয়োজন কেন, তা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু কাহিনি।
আরও শুনুন: কেন দোল উৎসব বলে উদযাপিত হয় ফাল্গুন পূর্ণিমাই?
যার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় দূর্বা অসুরের কাহিনি। হ্যাঁ, এই নামেই এক অসুরের উল্লেখ মেলে পুরাণে। তবে অসুর বলতে আমরা যেমনটা বুঝি, দূর্বা মোটেও তেমন ছিল না। অন্যান্য অসুরদের মতো কুকর্ম না করে ঈশ্বর সাধনা করেই দিন কাটাত সে। তার পরম আরাধ্য ছিলেন বিষ্ণু। কিন্তু দূর্বার এই আচরণ মোটেই পছন্দ হত না তার মায়ের। একবার তিনি ছেলেকে আদেশ দিলেন ব্রহ্মার তপস্যা করে অমরত্বের বর প্রার্থনার জন্য। দূর্বা ভালোমতোই জানত এমন বর পেলেই তাকে ত্রিলোক জয় করতে বলবেন তার মা। কিন্তু মাতৃআজ্ঞা তো পালন করতেই হবে। তাই সে তপস্যা শুরু করে। বেশ কয়েক বছর তপস্যার পর দূর্বার সামনে ব্রহ্মা প্রকট হন। ব্রহ্মাকে দেখামাত্রই সে করজোড়ে প্রণাম করে। তারপর সবিস্তারে জানায় কেন সে তপস্যায় বসেছে। সবটা শোনার পর ব্রহ্মা তাকে সত্যি সত্যি অমরত্বের বর দেন। কিন্তু একটু অন্যরকম ভাবে। চতুরাননের আশীর্বাদে দূর্বাসুর পরিণত হয় এক বিশেষ ঘাসে। এবং স্বয়ং ব্রহ্মা বলেন, এই ঘাস যে কোনও পুজোয় আবশ্যিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সেই থেকেই দূর্বা ঘাসের প্রচলন শুরু।
আরও শুনুন: প্রাক্তন প্রেমিকার নামেই সদ্যোজাত কন্যার নাম রাখতে চান ব্যক্তি, চটে লাল স্ত্রী
এ তো গেল দূর্বাসুরের গল্প। এছাড়াও অনেকে বলেন দূর্বা আসলে ত্রিদেবের কোনও এক দেবতার চুলের অংশ। অন্যদিকে এমনটাও শোনা যায়, এই ঘাস আসলে মা সীতা নিজের রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আবার অমৃত উত্থানের প্রসঙ্গেও উল্লেখ মেলে এই বিশেষ ঘাসটির। তবে আরও একটি কাহিনি দূর্বার জনপ্রিয়তার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। বলা বাহুল্য, এই কাহিনি থেকেই গণেশের দূর্বা প্রীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শোনা যায়, কোনও এক ভয়ংকর অসুরের সঙ্গে যুদ্ধের পর গণেশের শরীর ভয়ানক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেই সময় ২১টি দূর্বাঘাস তাঁর মাথার উপর রাখায় তিনি শান্ত হয়েছিলেন। সেই থেকেই গণেশ পুজোয় অন্তত ২১টি দূর্বা দিতেই হয়। তবে শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনি নয়, দূর্বার আবশ্যিকতার নেপথ্যে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাও রয়েছে। আসলে এই ঘাস শরীর ঠান্ডা রাখতে বিশেষভাবে কাজে লাগে। তাই মাথায় দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করার কিংবা পুজোর সময় দূর্বার আংটি পরার রেওয়াজ রয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, হিন্দু দেবদেবীর পুজোয় ব্যবহৃত অন্যান্য অনেক উপকরণের মতোই দূর্বা মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।