জ্যৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী। পঞ্জিকামতে এইদিন দশহরা। বাংলার নিতান্ত নিজস্ব উৎসব। শাস্ত্রমতে এইদিনে দেবী গঙ্গার মর্ত্যে আগমন হয়েছিল। তবে বিভিন্ন জায়গায় এইদিন মনসা পুজোরও চল রয়েছে। কী বিশেষ ফল মেলে এই তিথি পালনে? আসুন শুনে নিই।
তিনি নাগদেবী। হিন্দুমতে সর্পকুলের অধিশ্বরী তিনিই। সেই দেবী মনসার পুজোর অন্যতম তিথি হল দশহরা। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এই বিশেষ তিথিতে মনসা পুজোর চল রয়েছে। কথিত আছে, এইদিন ভক্তিভরে দেবীর পুজো করলে সর্প দংশন হয় না। সেইসঙ্গে জীবনে নেমে আসে সুখ সমৃদ্ধি। তবে শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ নন। যে কেউ এই দশহরা ব্রত পালন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মানতে হয় সামান্য কিছু নিয়ম।
আরও শুনুন: স্রেফ জামাই আদরের দিন নয়, ‘অরণ্যষষ্ঠী’ ব্রত পালনে সুস্থ থাকে সন্তান-সন্ততি
এই তিথিতে মূলত দেবী গঙ্গার আরাধনা হয়। কথিত আছে এই দিনেই গঙ্গার মর্ত্যে আগমন হয়েছিল। তবে গঙ্গাপুজো সেই অর্থে ঘরে ঘরে হয় না। বাংলার গৃহস্থলী এইদিন আয়োজন করে দেবী মনসার পুজো। পঞ্চমী তিথিতেও দেবী মনসার আরাধনা হয়। অনেকেই নাগপঞ্চমী তিথিকে দেবী মনসার প্রধান পুজোর তিথি হিসেবে মনে করেন। তবে সেই তিথি মূলত নাগপুজার তিথি। তাই দশহরার দিনেও অনেকেই ভক্তিভরে দেবী মনসার পুজোর আয়োজন করেন। পুজো হয় বিশেষ এক গাছে কিংবা দেবী মনসার মূর্তি গড়ে। দুটোর কোনওটাই যদি না থাকে সেক্ষেত্রে দেবী মনসার প্রতিকৃতি সামনে রেখেও পুজো করা যেতে পারে। দেবীর পুজোয় দুধ ও কলা আবশ্যক। এই বিশেষ নৈবেদ্য প্রদানে বড়ই তৃপ্ত হন দেবী মনসা। তবে পুজোর সময় কয়েকটা জিনিস খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যেমন এই পুজোয় ভুল করেও ধুনো জ্বালানো চলবে না। এমনি ধূপের ধোঁয়াও সহ্য করতে পারেন না দেবী। তাই মনসা পুজোয় কখনই ধোঁয়া হতে পারে এমন কিছু জ্বালানো উচিৎ নয়। এছাড়া পুজোয় বিভিন্ন ফল মিষ্ঠি নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সবসময় দেবী অনুচর, অর্থাৎ অষ্টনাগের উদ্দেশ্যেও নৈবেদ্য প্রদান করতে হয়। অনেকেই ঘরে কোনে কোনে সামান্য দুধ কলা ফেলে রাখেন। মনে করা হয়, দেবীর অনুচরেরা ঠিক সময় করে এসে এই দুধকলা খেয়ে যাবে। পুজোর শেষে ওই সবার প্রথমে দুধকলা প্রসাদ গ্রহন করতে হয়। তারপর অন্যকিছু।এই সামান্য নিয়ম পালনেই দেবী অত্যন্ত প্রসন্ন হন।
আরও শুনুন: নিয়ম মানলে মেলে ফল, শাস্ত্রমতে কোন দিকে মুখ করে পুজো করা উচিত?
বর্তমানে শহর হোক বা গ্রাম সর্বত্রই মনসা মন্দিরের দেখা মেলে। তবে একসময় তা ছিল না। এমনকি শাস্ত্রে তাঁর দেবী হিসেবে স্বীকৃতিও ছিল না। অবশেষে মহাদেবের একনিষ্ঠ ভক্ত চাঁদ সদাগর তাঁর পুজো করায় মর্ত্যে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন মনসা। মঙ্গলকাব্যে সেই ব্যাখ্যা মেলে। তবে একথা বলাই বাহুল্য, বর্তমানে দেবী মনসার পুজোর চল রয়েছে সর্বত্রই। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র সর্প দংশন নয়, দেবী ধনদায়িনী। কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে দেবী লক্ষ্মীর তুলনাও টানেন। এক্ষেত্রে যুক্তি হল, দুজনেরই নামের মিল রয়েছে। আবার কারও কাছে তিনি সন্তানপ্রদানকারিণি। সন্তানের আশাতেও দেবীর পুজো করেন অনেকেই। তাই ভক্তিভরে দেবী মনসার পুজো করলে একাধিক বিষয়ে লাভবান হতে পারেন ভক্তরা।