দুর্গাপুজো চলে চারদিন ধরে। কিন্তু কালীপুজো মাত্র একরাতের। প্রতিষ্ঠিত মূর্তি না হলে, পুজোর পরদিন তা বিসর্জন দেওয়াই নিয়ম। কিন্তু মূর্তি বিসর্জন দিলেও দেবীর হাতে থাকা খড়গটা জলে ফেলতে চান না অনেকেই। সযত্নে তুলে এনে বাড়িতে রেখে দেন। কী হয় এমনটা করলে? আসুন শুনে নিই।
কালী শক্তির প্রতীক। আর সেই শক্তির মূল আধার হল খড়গ। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের অনেকেই দেবীর অস্ত্র সম্পর্কে ঠিক এই ব্যাখ্যাই দেন। তাই কালী মূর্তির মতো ভক্তিভরে পুজো করা হয় খড়গও। যেসব মন্দিরে বলির চল রয়েছে, সেখানে আলাদা ভাবে খড়গ পূজার নিয়ম রয়েছে। তাই অনেকেই মনে করেন দেবীর খড়গ বাড়িতে রাখা দেওয়া অত্যন্ত শুভ।
আরও শুনুন: প্রাণে বাঁচিয়েছেন ‘মা’, মুসলিম সেনার অনুরোধেই যুদ্ধস্মারক হিসেবে গড়া হয়েছিল কালীমন্দির
কিন্তু সত্যিই কি এমনটা করা উচিত?
কথায় আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। এক্ষেত্রেও কথাটি ভীষণভাবে প্রযোজ্য। তবে মূল প্রসঙ্গে আসার আগে জানতে হবে, দেবীর হাতের খড়গ আসেলে কি? শাস্ত্রে দেবীর এই অস্ত্রটিকে শক্তির স্বরূপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এমনকি শ্রীশ্রী চন্ডীতেও বলা হয়েছে, ‘খড়্গ আমাদের রক্ষা করুক।’ দেবী দুর্গার হাতেও এই অস্ত্র দেখা যায়। এমনকি অধিকাংশ শক্তি মূর্তির হাতেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে থাকে এই খড়গ। এবার বলতে হয় বলির কথা। শাস্ত্রমতে সাধারণ কোনও অস্ত্র দিয়ে বলি দেওয়ার নিয়ম নেই। যে কোনও বলিতেই মূলত ব্যবহার করা হয় খড়গ। দেবী মূর্তিতে যে খড়গ দেখা যায়, বলির খড়গ তার থেকে আকারে অনেকটাই বড় হয়। পুজোর আগে সেই খড়গ ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেবীর পায়ের কাছে রাখা হয়। তারপর পুজো চলাকালীন সেখানে থাকে খড়গ। বলির সময়, সিঁদুর দিয়ে বিশেষ কিছু চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয় খড়গে। তারপর সেই খড়গ দিয়েই বলি সম্পন্ন হয়। অনেক জায়াগতেই আজকাল পশুবলি নিষিদ্ধ। কিন্তু তাই বলে খড়গ পুজোর নিয়ম বদলায়নি এতটুকু। চালকুমড়ো বা আখ বলির আগেও একইভাবে পুজো করা হয় খড়গ। সুতরাং এই অস্ত্রের সঙ্গে শক্তির যোগ যে নিবিড় একথা বলাই বাহুল্য। এবার আসা যাক এই অস্ত্র বাড়িতে রাখা উচিত কি না, সেই প্রসঙ্গে।
আরও শুনুন: বসন পরো মা… মাতৃস্বরূপা কালী কেন নগ্নিকা?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, বলির খড়গ যে কোনও অবস্থায় বাড়িতে রাখা একেবারেই উচিত নয়। কারণ খোলা অবস্থায় খড়গ রেখে দিলে তার ধার নষ্ট হয়ে যায়। যাতে বলির সময় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। শাস্ত্রমতে এমনটা হওয়া অত্যন্ত অশুভ। কিন্তু মণ্ডপে যে কালিমূর্তি থাকে, তার হাতে প্রতীকী খড়গ দেখা যায়। মূর্তি বিসর্জনের পর সেই খড়গ বাড়িতে এনে রাখা যেতেই পারে। মনে করা হয়, এমনটা করলে সারাবছর সব ধরনের বিপদের হাত থেকে ওই খড়গ রক্ষা করবে। যদিও শাস্ত্রমতে দেবীর বিসর্জনের সময় পুজোয় ব্যবহৃত যাবতীয় জিনিস জলে নিক্ষেপ করাই নিয়ম। সেইমতো খাঁড়াও জলে ফেলে দেওয়া উচিত। তবু অনেকেই সেকথা মাথায় না রেখে বাড়িতে খাঁড়া নিয়ে আসেন। সেই অর্থে মনের ভক্তি নিয়ে কেউ যদি এমনটা করেন, তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু শাস্ত্র যা মান্যতা দেয় না, তা করার আগে অনেকেই দুবার ভাবতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে একটা উপায় হতে পারে। সম্ভব হলে, রুপো বা পিতলের একটি প্রতীকী খড়গ তৈরি করিয়ে নিন। কালীপুজোর দিনে সেটাই মায়ের হাতে রাখুন। সঙ্গে থাকুন সাধারণ মূর্তির সঙ্গে দেওয়া লোহার খড়গও। তবে বিসর্জনের সময় স্রেফ লোহার খড়গটাই মূর্তির সঙ্গে জলে ফেলুন। আর পিতল বা রূপোর খড়গ বাড়িতে রেখে দিন। এতে শাস্ত্রের বিরোধিতাও হয় না, আবার পরিবারকে সবরকম বিপদের হাত থেকেও রক্ষা করা যায়।