দীপাবলি, ভাইফোঁটা শেষ। বাতাসে হিমেল হাওয়ার পরশ লাগতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এরই মধ্যে হাজির ছটপুজো। বাঙালির উৎসব না হলেও তার আঁচ লেগেছে বাংলাতেও। তবে বছরে এই একবার নয়, দুবার ছট পালনের নিয়ম রয়েছে। নেপথ্যে কী কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ছট আসলে সূর্যের পুজো। তবে একদিন নয়, চারদিন ধরে চলে উৎসব। ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপন। সেই থেকেই নাম হয়েছে ছট। মূলত বিহারী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই জনপ্রিয়তা বেশি। তবে যে কেউ এই উৎসবের অংশ হতে পারেন। তাও আবার বছরে একবার নয়, দু-দুবার ছট পালনের সুযোগ মেলে।
ছটকে ব্রত বললে ভুল হয় না। কারণ এর নিয়মের সঙ্গে বিভিন্ন ব্রতের মিল রয়েছে। সেই উপোস করে থাকা, ব্রতীর জন্য বিশেষ নিয়ম, সবই ছটের অঙ্গ। নিষ্ঠাভরে তা পালন করেন সকলে। একসময় স্রেফ বিহার, ঝাড়খণ্ডেই এই উৎসবের রমরমা চোখে পড়ত। ইদানিং বাংলাতেও ছট পালিত হয় বড় করে। ব্রতের নিয়ম বেশ কঠিন। ব্রতীকে দীর্ঘক্ষণ উপবাস করতে হয়। তারপর একবুক জলে নেমে সূর্যের আরাধনা করতে হয়। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত এই দুই সময় বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। নিয়ম অনুযায়ী, আরাধ্যকে গোটা ফল নিবেদন করতে হয়। এমনকি আস্ত কলার কাঁদিও সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যান ব্রতীরা। নারকেল, আপেল, আখ সহ একাধিক ফল তালিকায় থাকে। এর সঙ্গে থাকে ঠেকুয়া। আটা আর চিনি মিশিয়ে তৈরি এই বিশেষ মিষ্টি অনেকেই বেশ পছন্দ করেন। প্রসাদ হিসেবে তা সকলের মধ্যে বিলি করে দেন ব্রতীরা। নবরাত্রি ব্রতের মতো ছটও পালিত হয় বছরে দুবার। একটি কার্তিক মাসে, অন্যটি চৈত্র মাসে। দুবারই শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে। নিয়মেও তেমন হেরফের নেই। আসলে, যে নিয়মে নবরাত্রি, দুর্গাপুজো বছরে দুবার পালন করা হয়, সেই একই নিয়মে ছট পালিত হয় বছরে দুবার। সূর্য এবং তাঁর পত্নী ঊষা অর্থাৎ ছটি মাইয়ের পুজোই ছটপুজো। পৃথিবীতে জীবনের স্রোত অবিরাম রাখার জন্য সূর্যকে এই পুজোর মাধ্যমে উপাসনা করা হয়।
এমনিতে গ্রিক, রোমান বা মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান দেবতা হলেন সূর্য। ভারতীয় পুরাণও ব্যতিক্রম নয়। ঋগ্বেদের শ্লোকে সূর্যবন্দনার উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া রামায়ণ ও মহাভারত দুই জায়গাতেই এই ছট পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ছট পুজো প্রচলনের নেপথ্যে আরও একটি গল্প রয়েছে। পুরাণ মতে, নিঃসন্তান রাজা প্রিয়ংবদকে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করার পরামর্শ দেন মহর্ষি কাশ্যপ। সেই যজ্ঞ সম্পন্ন হলে প্রিয়ংবদের স্ত্রী মালিনীকে প্রসাদ হিসেবে পায়েস খেতে দেন মহর্ষি। কিন্তু দেখা যায়, মালিনীর প্রসব করা সন্তান মৃত। পুত্রশোকে বিহ্বল রাজা প্রিয়ংবদ সিদ্ধান্ত নেন প্রাণত্যাগের। ঠিক সেই সময় প্রকট হন ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনা। তিনি প্রিয়ংবদকে তাঁর পুজো করার নির্দেশ দেন। তাঁর আশীর্বাদে সন্তানকে ফের ফিরে পান রাজা। বলা হয়, এই দেবীর উত্পত্তি মূল বা আদি প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তাই তিনিই ষষ্ঠী বা ছটি মাইয়া। আবার অনেকে বলেন, ছট পুজোর শুরু কর্ণের হাত ধরে। সূর্যপুত্র কর্ণ নিজে প্রতিদিন নিষ্ঠাভরে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিতেন। তাও আবার একবুক সমান জলে দাঁড়িয়ে। সেই থেকেই ব্রতের ওমন নিয়ম। এছাড়া পুরাণের নারী চরিত্ররাও স্বামীর মঙ্গলকামনায় এই ব্রত পালন করতেন বলে শোনা যায়। বর্তমানেও সেই রীতি অনুসরণ করেই ব্রত পালন করেন ভক্তরা।