ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র কে? অনেকেই হয়তো বলবেন, যিনি ভক্তিভরে ইশ্বরের সাধনা করেন তিনি। কিংবা যিনি সর্বদা সৎ থাকেন। যার নিত্যদিনের বেশিরভাগটাই সাধন ভজনে নিয়োজিত। কিন্তু সত্যিই কী তাই? এ প্রসঙ্গে ঠিক কী ব্যাখ্যা দেয় গীতা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্ম আমাদের ধারণ করে। জীবনের এই শাশ্বত সত্য বহুকাল থেকে আমরা জেনে এসেছি। আর সেই ধর্মযাপনের নিমিত্ত ইশ্বরসাধনা। কিন্তু সাধনা করলেই কী ঈশ্বরের প্রিয় হওয়া সম্ভব? স্বয়ং অর্জুন সেই প্রশ্নই করেছিলেন শ্রী কৃষ্ণকে। উত্তরে মাধব যা বলেছিলেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা মেলে ভাগবত গীতার ভক্তিযোগ পর্বে। তবে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হওয়ার প্রসঙ্গেই উঠতে পারে ধর্মের কথা। তাহলে ধার্মিক বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়?
আরও শুনুন: নিষ্ঠাভরে ব্রত-উপবাস করলেই মেলে ঈশ্বর? অর্জুনকে উত্তর দিয়েছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ
শাস্ত্রে বলে,
সর্বেষাং যঃ সুহৃন্নিত্যং সর্বেষাং চ হিতে রতঃ।
কায়েন মনসা বাচা স ধর্মং বেদ জাঞ্জলে।।
অর্থাৎ, যিনি কায়মনোবাক্যে সকলের হিতে রত থাকেন, তিনিই অনুধাবন করেছেন প্রকৃত ধর্মকে। হিন্দুধর্মের শাস্ত্রসমূহ অগাধ জ্ঞানের রাশি। এই শাস্ত্রের আধারেই যুগ যুগ ধরে ঋষিরা তাঁদের সাধনালব্ধ জ্ঞান আমাদের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। সেগুলোর অর্থ উপলব্ধি করতে পারলেই আমরা হয়ে উঠতে পারি প্রকৃত ধার্মিক। আমাদের এলোমেলো জীবনকে তাই সঠিক পথে চালনা করতে পারে শাস্ত্রের যথাযথ জ্ঞান। তবে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হওয়ার ক্ষেত্রে স্রেফ এই ধর্মজ্ঞান যথেষ্ট নয়। বরং প্রিয় পার্থকে এ বিষয়ে একেবারেই অন্য ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। তিনি বলছেন,
যস্মান্নোদ্বিজতে লোকো লোকান্নোদ্বিজতে চ যঃ।
হর্ষামর্ষভয়োদ্বেগৈমুক্তো যঃ স চ মে প্ৰিয়ঃ ৷৷
আরও শুনুন: সুখ-সমৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক বাস্তুদোষ! চার চিহ্নেই মিটতে পারে সমস্যা, কী কী জানেন?
এর আক্ষরিক ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, যাহা হইতে কোনও প্রাণী উদ্বেগ প্রাপ্ত হয় না, যিনি স্বয়ং কোনো প্রাণী কর্তৃক উত্যক্ত হন না, এবং যিনি হর্ষ, অমর্ষ, ভয় ও উদ্বেগ হইতে মুক্ত, তিনি আমার প্রিয়। সুতরাং এর থেকেই এটুকু স্পষ্ট হতে পারে, ধর্মাচরণের আড়ম্বর কিংবা উপবাসের বহরে ভগবানের প্রিয় হওয়া সম্ভব নয়। এমনকি নিয়মিত ভক্তি সাধ্নায় নিয়োজিত থেকে এই স্বীকৃতি নাও মিলতে পারে। এর জন্য দরকার নিত্যদিনের অভ্যাস। নিজেকে উন্নত করে তোলার অভ্যাস। ইশ্বরের প্রিয় পাত্র হতে পারেন তিনিই, যিনি যে কোনও অবস্থায় নিজেকে স্থির রাখতে জানেন। কোনও অবস্থাতেই তাঁকে উদ্বেগ স্পর্শ করবে না। না তিনি নিজে উদ্বিগ্ন হবেন, না কারও উদ্বেগের কারণ হবেন। পাশাপাশি যিনি অন্যের ক্ষতি চাইবেন না কখনই। কাউকে শাপ শাপান্ত করা কিংবা কাউকে উত্যক্ত করা যার স্বভাব হবে না। সেইসঙ্গে তাঁকে হতে হবে অকুতোভয়। তিনি কাউকে ভয় দেখাবেনও না। তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য হবে সকলের সেবা ও ভাল করা। রাগ, হিংসা এই ধরনের কোনওকিছুই তিনি নিজের মধ্যে রাখবেন না। দুঃখ বা কষ্টও বিচলিত করবে না তাঁকে। এই সমস্ত গুণ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে দিতে পারে যে কাউকে।