শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার বাহন পশুরাজ সিংহ। তবে প্রতিবছর দেবীর আগমন ঘটে চার বিশেষ যানে চড়ে। দেবীর গমনও সেইভাবেই। বিশ্বাস, এর উপরই নির্ভর করে গোটা বছরটা কেমন যাবে সেই হিসাব। এবার দেবীকে মর্ত্যে আনবে কোন যান? আসুন শুনে নিই।
বছর ঘুরে আবার মর্তে আসছেন উমা। দেবীর এই আগমন বাঙালির কাছে ঘরের মেয়ের বাপের বাড়ি ফেরার মতোই। কখনও গজ, কখনও ঘোড়া আবার কখনও নৌকা কিংবা পালকি, এই চার যানে চড়ে মর্তে আসেন উমা। প্রতিবছর নিয়ম করে অদলবদল ঘটে এই যানগুলির। আর সেই বদলের ভিত্তিতে আগাম আভাস মেলে, কেমন কাটবে বছরটা।
কিন্তু এই বদল ঠিক হয় কীসের ভিত্তিতে?
শাস্ত্র বলে,
“রবি চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ,
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং, নৌকায়াং বুধবাসরে।”
অর্থাৎ দেবীর আগমন কোন দিনে হচ্ছে সেই মতো ঠিক হবে বিশেষ যান। তার সঙ্গেই জড়িয়ে সেই বছরের ভাগ্য। শ্লোকের ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, সপ্তমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন হবে গজ বা হাতি। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবীর বাহন হয় ঘোটক বা ঘোড়া। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। আবার সপ্তমী বুধবার হলে দেবীর বাহন হয় নৌকা। বলে রাখা ভাল, দুর্গাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হলেও, মায়ের মর্তে আগমনের আসল তিথি সপ্তমী। এই দিন থেকে দেবী আরাধনার আসল উপাচার শুরু করা হয়। তাই দুর্গা সপ্তমীর অবস্থান দেখেই স্থির করা হয় দেবীর আগমন কোন যানের মাধ্যমে হবে। একইভাবে দশমী তিথি দেবী পূজার শেষ দিন। এই তিথির সাপ্তাহিক অবস্থান দেখে স্থির হয় মায়ের গমন হবে কোন যানে। যেমন দশমী যদি রবি বা সোমবার হয়, তাহলে দেবীর বাহন হয় গজ। দশমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দশমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর গমন হবে দোলা বা পালকিতে। আবার দশমী বুধবার হলে নৌকায় করে কৈলাসে ফিরবেন দেবী।
সাধারণত প্রতি বছর দুর্গার আগমন ও গমন একই বাহনে হয় না। তবে কোনও বছর এমনটা হলে তা অশুভ ইঙ্গিত বহন করে বলেই মনে করেন ভক্তরা। যদিও চলতি বছরে এমনটা হচ্ছে না। পঞ্জিকামতে এবার দেবীর আগমন দোলায়, গমন গজে। পঞ্জিকামতে গজ হল দেবীর শ্রেষ্ঠ যান। দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্তলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। সে হিসেবে আগামী বছরটা অত্যন্ত সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠার কথা। তবে দেবীর আগমন দোলায়, যা শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। বলা হয়, দেবীর দোলায় আগমন ও পালকিতে গমন হলে তার ফল হয় ভয়ংকর। দেশজুড়ে দেখা দেয় মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধের মতো ভয়ংকর লক্ষণ, যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। আই আগামী বছরটা কেমন যাবে সে নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন। এছাড়া দেবীর অন্যান্য যান নিয়েও কিংবদন্তি রয়েছে। যেমন, দুর্গা যদি ঘোড়ায় চড়ে আসেন বা বিদায় নেন, তবে তার ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। আবার দেবীর আসা বা যাওয়া নৌকায় হলে প্রবল বন্যা ও খরা দুয়েরই প্রকোপ দেখা দিতে পারে, এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। কিন্তু নৌকায় গমন মনস্কামনা পূর্ণ হওয়া সূচিত করে। ফলে ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্যশ্যামলা।