একাদশী মূলত চান্দ্র তিথি। শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষে একাদশী তিথি, হিন্দুমতে অতি পবিত্র। বৈষ্ণব মতানুসারে একদশী ব্রতপালন শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। এর মধ্যে মোহিনী একাদশীর সঙ্গে জড়িয়ে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ লীলাকথন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শাস্ত্রে একাদশী তিথিতে নিরম্বু উপবাসের উল্লেখ মেলে। পঞ্জিকামতে বছরে মোট ২৪ টি একাদশী ব্রত পালনীয়। তবে কিছুক্ষেত্রে তা ২৬ টি-ও হতে পারে। অনেকেই সবকটি একাদশী পালন করতে পারেন না। তাই কয়েকটি বিশেষ একাদশী ব্রত পালন করলেই সম্পূর্ণ ব্রতে ফল মেলে। বছরের শুরুতেই অর্থাৎ বৈশাখে যে দুটি একাদশীর উল্লেখ মেলে তার মধ্যে মোহিনী একাদশী উল্লেখযোগ্য। কারণ এই তিথির সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর এমন এক লীলাকাহিনি জড়িয়ে, যা অবাক করে ভুক্তকূলকে।
পুরাণমতে ভগবান বিষ্ণু ত্রিভুবনের পালনকর্তা। বিপদে তাঁর স্মরণ নিলে পরিত্রাতা রূপে প্রকট হন। কখনও জগন্নাথ, কখনও কৃষ্ণ, কখনও আবার রাম অবতারে জগত সংসারকে রক্ষা করেন। স্রেফ মানবকূল নয়, ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের পরিত্রাতা রূপেও ধরা দিয়েছেন বারবার। বিষ্ণুর মোহিনী অবতার সেই কাহিনিই বলে। কথিত আছে, একা দেবতা বা অসুরের পক্ষে সমুদ্র মন্থন সম্ভব ছিল না। তাই একত্রে সেই কাজ করা হয়েছিল। দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে উঠে আসে কাঙ্খিত অমৃত পাত্র। কিন্তু সেই পাত্রে কার অধিকার থাকবে সেই নিয়ে দেব-অসুরে গোল বাধে। লড়াই এমন মাত্রা ছাড়ায় যে দেবতারা বিষ্ণুর শরণ নিতে বাধ্য হন। দেবতাদের সমস্যার কথা শুনে বিষ্ণুর দয়া হয়। দেবতাদের আস্বস্ত করেন নারায়ণ। এরপর তিনি মোহিনী রূপ ধারণ করেন। সুদর্শন নারায়ণ হয়ে ওঠেন অপরূপ সুন্দরী মোহিনী। তাঁর রূপের ছটায় দেবতাদেরও চোখ ঝলসে যায়। ওইভাবেই ভগবান হাজির হন অসুরদের শিবিরে। এবং রূপের মায়ায় সকলকে আচ্ছন্ন করে অমৃত পাত্র নিয়ে চলে আসেন দেবতাদের কাছে। সেইভাবেই অসুরদের থেকে অমৃত উদ্ধার করে দেবতাদের রক্ষা করেন বিষ্ণু। তবে এই একটি কাহিনিই নয়, বিষ্ণুর মোহিনী অবতার নিয়ে আরও কিছু কিংবদন্তী শোনা যায়। যার মধ্যে একটি স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গেও সম্পর্কিত। পুরাণমতে, মহাদেবের বরে বলিয়ান হয়ে মহেশ্বরকেই ভস্ম করতে উদ্যত হন ভস্মাসুর। অসহায় মহাদেব ভস্মাসুরের হাত থেকে বাঁচতে এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াতে শুরু করেন। এইসময় বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করে ভস্মাসুরের সামনে আসেন। রূপে আচ্ছন্ন তাঁর ইশারায় নাচতে শুরু করেন। এইসময় ছল করে নাচের মুদ্রায় ভস্মাসুরকে বধ করেন মোহিনী রূপী বিষ্ণু। আবার এই রূপের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে মহেশ্বর মোহিনিকে বিয়েও করেন বলে পুরাণের কাহিনি রয়েছে। তাঁদের মিলনে সন্তান হিসেবে আয়াপ্পার জন্ম হয়। যিনি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ দেবতা। তাই হিন্দু ধর্মে অন্যান্য একাদশীর মতো মোহিনী একাদশী পালন বিশেষ শুভ মনে করা হয়।
বিভিন্ন বিষ্ণু মন্দিরে মাসে দুবার অবশ্যই এই ব্রত পালন করা হয়। তবে বাড়িতেও সহজেই একাদশী ব্রত পালন সম্ভব। নিয়ম হিসেবে শাস্ত্রে তেমন কিছু নির্দিষ্ট করা নেই। যে কেউ শ্রী বিষ্ণুর স্মরণ নিয়ে, এই ব্রত পালন করতে পারেন। মনে করা হয়, একাদশী ব্রত পালন করলে যে কোনও দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করেন স্বয়ং নারায়ণ। মন্দিরে বিভিন্ন উপাচারের মাধ্যমে এই দিন নারায়ণ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে বাড়িতে সেই বিশাল আয়োজন সম্ভব নয়। তাই সাধারণ কিছু নিয়ম মানলেই একদশী ব্রত পালন হতে পারে। যেকোনও ব্রতের দিনই শুদ্ধাচারে কাটানো নিয়ম।