দীপাবলি, ভাইফোঁটা শেষ। বাতাসে হিমেল হাওয়ার পরশ লাগতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এরই মধ্যে হাজির ছটপুজো। বাঙালির উৎসব না হলেও তার আঁচ লেগেছে বাংলাতেও। এই ছটপুজো আসলে কী? আর কী কী হয় ছটপুজোয়? আসুন শুনে নিই।
ছটপুজো আসলে সূর্য উপাসনা। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপন করা হয় ছটপুজো। ষষ্ঠী শব্দ থেকেই এসেছে ছট বা ছঠ। মূলত পূর্বভারত জুড়ে এই উৎসব পালনের রমরমা হলেও পিছিয়ে নেই বাংলাও। সূর্য এবং তাঁর পত্নী ঊষা অর্থাৎ ছটি মাইয়ের পুজোই ছটপুজো। পৃথিবীতে জীবনের স্রোত অবিরাম রাখার জন্য সূর্যকে এই পুজোর মাধ্যমে উপাসনা করা হয়।
আরও শুনুন: পরমপদকমলে: ভোগবাসনায় নারীকে টেনে নামায় পুরুষই, মনে করতেন শ্রীরামকৃষ্ণ
এই ছট পুজো প্রচলনের নেপথ্যে আছে একটি গল্প। পুরাণ মতে, নিঃসন্তান রাজা প্রিয়ংবদকে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করার পরামর্শ দেন মহর্ষি কাশ্যপ। সেই যজ্ঞ সম্পন্ন হলে প্রিয়ংবদের স্ত্রী মালিনীকে প্রসাদ হিসেবে পায়েস খেতে দেন মহর্ষি। কিন্তু দেখা যায়, মৃত সন্তান প্রসব করেন মালিনী। পুত্রশোকে বিহ্বল রাজা প্রিয়ংবদ সিদ্ধান্ত নেন প্রাণত্যাগের। ঠিক সেই সময় প্রকট হন ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনা। তিনি প্রিয়ংবদকে তাঁর পুজো করার নির্দেশ দেন। তাঁর আশীর্বাদে সন্তানকে ফের ফিরে পান রাজা। বলা হয়, এই দেবীর উত্পত্তি মূল বা আদি প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তাই তিনি ষষ্ঠী বা ছটি মাইয়া।
আরও শুনুন: Spiritual: কীভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অতিক্রম সম্ভব? পথ দেখিয়েছিলেন কবীর
গ্রিক, রোমান বা মিশরীয় সভ্যতার মতোই ভারতীয় পুরাণেরও অন্যতম প্রধান দেবতা হলেন সূর্য। ঋগ্বেদের শ্লোকেও সূর্যবন্দনার উল্লেখ রয়েছে। বেদ মতে, ঊষা হলেন অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের মাতা। রামায়ণ ও মহাভারত দুই জায়গাতেই এই ছট পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, ১৪ বছর বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফেরার পর রাবণবধের পাপ থেকে মুক্তি পেতে রাজসূয় যজ্ঞ করার সিদ্ধান্ত নেন রামচন্দ্র ও সীতা। এর জন্য মুদগল ঋষিকে আমন্ত্রণ জানান অযোধ্যাপতি। কিন্তু ঋষি তাঁদের নিজের আশ্রমে ডেকে পাঠান। ঋষি মুদগল রাম-সীতাকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যদেবের উপাসনার নির্দেশ দেন। মুদগলের আশ্রমেই সীতা ৬ দিনের সুর্যপুজো সম্পন্ন করেন। আবার মহাভারত থেকে জানা যায়, প্রতিদিন এক কোমর জলে দাঁড়িয়ে সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করতেন কর্ণ। সেই রীতি মেনেই ছটপুজোতেই অর্ঘ্য নিবেদনের প্রচলন রয়েছে।
বাকি অংশ শুনে নিন।