সরকার গড়েই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দরজা খোলার নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি সরকার। যা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু কেন? রহস্যে ঘেরা জগন্নাথ মন্দিরের চার দরজার কী এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির। শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় এই মন্দির। গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত স্বয়ং জগন্নাথ। প্রতিদিন তাঁর দর্শনের আশায় দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন। মন্দিরে ঢোকার মোট চারটি দরজা রয়েছে। যার মধ্যে কেবল একটি এতদিন খোলা ছিল। সম্প্রতি ওড়িশায় সরকার গড়ে সেই নিয়ম বদলেছে বিজেপি। খুলে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের চারটি দরজাই।
আরও শুনুন: হাওয়ার উলটোদিকে ওড়ে ধ্বজা, কম পড়ে না ভোগ, জগন্নাথ মন্দির ঘিরে আছে অলৌকিক রহস্য
ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মের ভিতর যে অপূর্ব সমন্বয়ের সংস্কৃতি নিহিত আছে, প্রভু জগন্নাথদেব তাঁরই মূর্ত প্রতীক। বছরে একবার রথে চড়ে নগর পরিক্রমায় বেরোন প্রভু। তাঁদের সেই যাত্রায় শামিল হন দেশ বিদেশের লাখো লাখো ভক্ত। শোনা যায়, প্রভু জগন্নাথের রথযাত্রা ঘিরে এই বিশাল আয়োজন বিস্মিত করেছিল ব্রিটিশদেরও। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রভুর অদ্ভুত লীলাকাহিনি। আর ছড়িয়েছিল কিছু রহস্যের কথা। যা আজও ভেদ করতে পারেননি দেশ-বিদেশের কেউই। আর এইসব রহস্যের উৎস হিসেবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কথাই বলতে হয়। মন্দিরটির পরতে পরতে রহস্য। একেবারে চূড়ায় থেকে ধ্বজা সবসমইয় হাওয়ার উলটোদিকে ওড়ে। আবার মন্দিরে পা রাখলেই সমুদ্রের গর্জন একেবারে স্তব্ধ। মন্দিরের উপর দিয়ে কোনও পাখি উড়ে যেতে দেখেনি কেউ। এমনকি উড়োজাহাজও এই মন্দিরের উপর দিয়ে ওড়ে না। শুধু তাই নয়, মন্দিরের প্রতিটি কারুকাজও অবাক করার মতো। দরজা থেকে শুরু করে ভিতরে থাকা অন্যান্য দেবদেবীর মন্দিরেও অসাধারণ কারুকাজ লক্ষ করা যায়। তবে মন্দিরের চারটি দরজার কথা না বললেই নয়। আলাদা করে এর সঙ্গে কোনও রহস্যের যোগ না থাকলেও, চারটি দরজারই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আরও শুনুন: রথযাত্রার আনন্দে মাতবে গোটা দেশ, কীভাবে সূচনা হয়েছিল এই উৎসবের?
আগে মন্দিরের চারটি দরজাই পুণ্যার্থীদের জন্য খোলা থাকত। করোনা কালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তৎকালীন বিজেডি সরকার। তিনটি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোভিড পরবর্তী সময় আর সেই তিন দরজা খোলেনি। বিধানসভা ভোটের ইস্তেহারে এই বিষয়টিতে জোর দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। তাই ক্ষমতায় ফিরতেই মন্দিরের চার দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ওড়িশার প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। চারটি দরজা চারদিকে অবস্থিত। অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে মন্দিরে প্রবশ করার মূল চারটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজার পাশে বা উপরে বিভিন্ন জন্তুর মূর্তি বসানো। দরজার নামও সেইমতো।
পুবের দরজার সিংহের মূর্তি দেখা যায়। এর নাম সিংহ দুয়ার।কথিত আছে, এই দরজা দিয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের মোক্ষলাভ হয়। তাই অনেকে এই দরজাটিকে মোক্ষ দ্বারও বলেন। দরজায় গৌড়ীয় নৃসিংহ, ভাগ্য হনুমান এবং কাশী বিশ্বনাথের প্রতীকীও লক্ষ করা যায়।
পশ্চিমের দরজাটি বাঘ্র্য দুয়ার। দরজার দুই পাশে দুটি বাঘের মূর্তি। এঁরা ধর্মের প্রতীক। এখানে রামেশ্বর, নিশা নৃসিংহ এবং বারবারিক হনুমানের প্রতীকী রয়েছে।
দক্ষিণের দরজা অশ্ব দ্বার। এর পাশে অশ্বারোহী দুই মূর্তি দেখা যায়। এঁরা জগন্নাথ এবং বলরাম। কথিত আছে, এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে কামের অনুভূতি কেটে যায়। এখানে অবশ্য একাধিক দেবতার প্রতীক রয়েছে। যেমন, লোকনাথ, ঈশানেশ্বর, পরশুনাথ, ধবলেশ্বর, লক্ষ্মী নৃসিংহ এবং তপস্বী হনুমানের প্রতীকী রয়েছে এই দরজায়।
উত্তরের দরজাটি হস্তী দুয়ার। যদিও এই দরজাইয় মূর্তিগুলি খুব একটা স্পষ্ট নয়। শোনা যায়, বিদেশি আক্রমণ এই স্থাপত্য নষ্ট করেছে। তবে এখানেও লোকনাথ, ঈশানেশ্বর, পরশুনাথ, ধবলেশ্বর, লক্ষ্মী নৃসিংহ এবং তপস্বী হনুমানের প্রতীকী রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি দরজাতেই শিব, বিষ্ণু এবং হনুমানের বিশেষ কিছু রূপ দেখতে পাওয়া যায়। এতদিন এই চার দরজা বাইরে থেকে দেখা গেলেও, ছোঁয়ার বা এর মাধ্যমে ভিতরে ঢোকার উপয়ায় ছিল না। এবার সেই উপায়ও করে দিল ওড়িশার নতুন বিজেপি সরকার।