কুম্ভমেলায় শাহী স্নান! যে কোনও দিন, বিশেষ কয়েকটা দিন মেলে সেই সুযোগ। মৌনি অমাবস্যা তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ মুহূর্তে এইদিন কোটি কোটি ভক্ত ডুব দেবেন সঙ্গমের জলে। কী মাহাত্ম্য এই তিথির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঘোর অমানিশি রাত্রি মানেই তন্ত্রমতে মা কালীর আরাধনার পুণ্য লগ্ন। প্রতি মাসেরই অমাবস্যা তিথির রয়েছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ব্যতিক্রম নয় মৌনি অমাবস্যাও। তবে এইদিনের সঙ্গে স্রেফ কালী আরাধনার প্রসঙ্গ জড়িয়ে নেই। বরং তার চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে।
তন্ত্র মতে এই অমাবস্যা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তবে তার চেয়েও বেশি তার আগের রাত, তথা রটন্ডী চতুর্দশীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক কঠিন ও গুপ্ত তন্ত্র সাধনা করার জন্য এই রাতকেই ভীষণভাবে উপযুক্ত মনে করেন সাধকরা। তাঁদের মতে, এই রাত্রির কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে সাধকের মোক্ষলাভ সম্ভব হয়। সাধক তাঁর চরমতম গুহ্য সাধনা এই রাতে সম্পন্ন করতে পারেন। তবে এই বছর মৌনি অমাবস্যা অন্য এক কারণেও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কুম্ভের শাহী স্নানের কথাই বলছি। এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে কুম্ভের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলির মধ্যে একটি হিসেবে। কোটি কোটি ভক্ত কুম্ভে ভিড় জমাবেন এই উপলক্ষে। এবার আসা মৌনি অমাবস্যার পুরাণ প্রসঙ্গে।
কথিত আছে, এই দিনে ব্রহ্মা মনুকে সৃষ্টি করেছিলেন। সেই থেকেই এমন নাম। এর সঙ্গে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির যোগ রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। সুতরাং এই দিনে কোনও কাজ শুরু করলে তা নিশ্চিতভাবে শুভ ফল দেবে। স্রেফ খেয়াল রাখতে হবে সেই কাজ মানুষের কল্যাণকর হতে হবে। কাউকে ঠকানো বা হঠকারিতার উদ্দেশ্য হলে তা নিশ্চিতভাবে সফল হবে না। এই দিনে আলাদাভাবে কিছু ব্রত পালনের প্রয়োজন নেই। অমাবস্যায় কেউ কেউ উপোস করেন, এই দিনও তেমনটা করা যায়। তারপর মায়ের পুজো দিয়ে ভক্তিভরে মনের ইচ্ছা জানালে তা পূরণ হতেই পারে। তবে এই দিন মৌন থাকার পরামর্শ দেন কেউ কেউ। মৌনি অমাবস্যায় এমনটা করলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে। সারাদিন না হলেও, অন্তত কয়েক ঘণ্টা মৌনতা অভ্যাস করাই যায় মৌনি অমাবস্যায়। লেখকদের জন্য এই দিন বিশেষ গুরুত্বের হতে পারে। চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে এই দিনের সঠিক সময়যাপন। নিজেকে শান্ত রাখা এবং শান্ত পরিবেশে থাকা সবই কার্যকর হতে পারে। পাশাপাশি কেউ যদি কুম্ভমেলায় স্নান করতে পারেন এই দিনে তাহলেও বিশেষ পুণ্য অর্জনের সুযোগ মিলবে। এমনটাই ধারণা শাস্ত্রজ্ঞদের। সবমিলিয়ে মৌনি অমাবস্যা যে শাস্ত্রেওও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা বলাই যায়।