গণেশ মূর্তির শুঁড় বামদিকে হবে না ডানদিকে? এই প্রশ্ন অনেকেরই মনেই থাকে। বিশেষ করে যারা বাড়িতে পুজোর জন্য মূর্তি কিনবেন। এ বিষয়ে শাস্ত্রের কী ব্যাখ্যা? গণপতি মূর্তির শুঁড় বাম দিকে না ডান দিকে থাকলে শুভ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সিদ্ধিদাতা হিসেবেই গণেশ পূজিত। তাঁর পুজো করা মানেই সকল বিঘ্নের অবসান। গণেশ চতুর্থীতে বিঘ্নহর্তা গণেশের আরাধনা চলে দেশ জুড়ে। স্রেফ মন্দির বা মণ্ডপ নয়, বাড়িতেও অনেকেই গনেশ পুজোর ব্যবস্থা করেন। আর সেখানেই সকলের মনে যে প্রশ্ন থাকে, মূর্তিতে গণেশের শুঁড় কোনদিকে হবে?
গণেশ মূর্তি মানেই শুভ। অর্থাৎ মূর্তির শুঁড় যে দিকেই থাকুক ভক্তিভরে তার পুজো করলে অভিষ্ঠ সিদ্ধ হবেই। যে-কোনও শুভ অনুষ্ঠানের সূচনাও তাঁকে স্মরণ করে হয়। এমনকি বাড়ির প্রবেশদ্বারেও অনেকে গণেশের প্রতীকী রাখেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূর্তির শুঁড় বামদিকে। এটিই প্রচলিত। সেই হিসাবে বাড়ির জন্য অনেকেই বামশুণ্ডি গণেশ মূর্তি নিয়ে আসেন। এতে ক্ষতি কিছুই নেই। তবে শাস্ত্রমতে গণেশের বামদিকে শুঁড় ধন এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক। তাই এই ধরনের শুঁড়যুক্ত মূর্তি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রাখা ভালো। অন্যদিকে গৃহস্থ বাড়ির জন্য ডানদিকে শুঁড়যুক্ত গণেশ বিশেষ ফলদায়ক। তাই বলে কি বামদিকে শুঁড় থাকা মূর্তি বাড়িতে পুজো করা যায় না? একেবারেই তা নয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অর্থ ছাড়া কিছু ভাবা অসম্ভব। তাই গণেশের আরাধনা যদি বাড়িতে ধনসম্পদের আগমন ঘটায় তাহলে ক্ষতি কীসের! সেই কারণেই বামদিকে শুঁড়যুক্ত গনেশমূর্তি অধিক প্রচলিত। কথিত আছে এই গণেশমূর্তি বাস্তুদোষ কাটিয়ে দিতে পারে। তাতে সংসারে মঙ্গল হয়। কিন্তু কেউ যদি সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে গণেশ আরাধনা করতে চান তাহলে ডানদিকে শুঁড় যুক্ত গনেশমূর্তি রাখা উচিত। এই মূর্তির আরাধনা করলে শরীর সুস্থ থাকে। এমনটাও অনেকেই বলে থাকেন। এছাড়া সামনের দিকে বা সোজাসুজি রয়েছে এমন শুঁড়ও দেখা যায় গণেশ মূর্তিতে। শাস্ত্রে এর তেমন ব্যাখ্যা মেলে না। এমনকি গণেশের শুঁড় ডান বা বামে বেঁকে যে ‘ওম’ আকারকে ইঙ্গিত করে এক্ষেত্রে তা হয় না। তবে এই মূর্তি পুজো করলেও ক্ষতির ভয় নেই। কারণ আখেরে সেই বিঘ্নহর্তাকেই স্মরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া মূর্তির রং নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। বিভিন্ন মন্দিরে সম্পূর্ণ লাল রঙের গণেশ মূর্তি দেখা যায়। বাড়িতে এই ধরনের মূর্তি না আনাই ভালো। বাড়ি বা অফিসে সাধারণ রঙের যে গণেশ মূর্তি হয় তা পুজো করাই বাঞ্ছনীয়। মূর্তিতে অবশ্যই যেন প্রভুর বাহন মুষিক থাকে, তা দেখা নিতে হবে। এছাড়া কোনও খুঁত যেন মূর্তিতে না থাকে সে দিকেও নজর রাখা একান্ত প্রয়োজন। বাড়িতে পুজো করার ক্ষেত্রে আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন একবার গনেশপুজো শুরু করলে অন্তত তিনবছর তা করতে হয়। চাইলে তার পরও করা যেতেই পারে। বিশেষ কোনও আড়ম্বর না করলেও চলে। বলা হয় গণেশের সব থেকে অপছন্দের বিষয় হল অহংকার। তাই কেউ ভক্তিভরে অহংশূন্য মনে তাঁর অর্চনা করলে অবশ্যই তুষ্ট হন গণেশ। স্বয়ং চন্দ্রদেব থেকে শুরু করে ধনপতি কুবের, সকলেই গণেশের সামনে নিজের অহংকার বির্সজন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। গণেশের লীলা কথনের সেইসব গল্পের বর্ণনা রয়েছে পুরাণেই। ভোগ হিসেবে লাড্ডু বা মোদক দিলে বিশেষ তুষ্ট হন গণপতি। মোদকের পাশাপাশি গণেশ পছন্দ করেন দূর্বা ঘাস। এছাড়াও তাঁর পুজো করার ক্ষেত্রে আর একটি প্রয়োজনীয় উপাচার হল নারকেল। অনেকেই গণেশের উদ্দেশে ঘট স্থাপন করে তার উপর নারকেল রাখেন। এইসব সাধারণ নিয়ম মেনে গণেশ পুজোর ব্যবস্থা করলে সংসারের সব বাধা বিপত্তি কেটে যায়। সিদ্ধিদাতার আশীর্বাদে সুখের বার্তা নেমে আসে সকলের জীবনে।