বছরে মাত্র একদিন খোলা। তাতেই উপচে পড়ে ভিড়। সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অথচ আরাধ্য কোনও অচেনা দেবতা নন। বরং বাঙালি তথা হিন্দুসমাজে অতি জনপ্রিয় দেবতা মহাদেব। কোন মন্দিরের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এ দেশে মন্দিরের কমতি নেই। তার মধ্যে শিবমন্দিরের সংখ্যাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি। কারণটাও সহজেই অনুমেয়। শাস্ত্র বলছে, দেবতাদের আদি দেবতা তিনিই। নীলকন্ঠ্য, পিনাকপানি, ত্রিকালের অধীশ্বর মহাদেব। তাঁর কাছে মন থেকে চাইলে পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই বলেই ভক্তের বিশ্বাস। তাই দেশের আনাচে কানাচে আর কিছু থাকুক না থাকুক, একখানা শিবমন্দির থাকতে বাধ্য।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা রয়েছে- “যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।”
:আরও শুনুন:
তাজমহলে শিবমূর্তি! শ্রাবণমাসে গঙ্গাজল নিয়ে হাজির মহিলা, কী হল তারপর?
অর্থাৎ যখন আলো ছিল না, অন্ধকার ছিল না; দিন ছিল না, রাত্রি ছিল না; সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন। সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন। তাই শিবই সত্য। শিবই সুন্দর। অল্পেতেই তিনি তুষ্ট। জীবনের আসল সত্য বুঝতে গেলে শিবসাধনার পরামর্শ দেন সাধকরা। শিব শব্দের অপর একটি অর্থ হল যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে। লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই – বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। হিন্দুধর্মে, জগতের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়। অতএব শিবলিঙ্গ তা যেখানেই থাকুক, অর্চনা করা যেতে পারে। তবু কিছু শিবলিঙ্গ বিশেষ। এক্ষেত্রে জ্যোতির্লিঙ্গের কথা বলতে হয় সবার আগে। তার বাইরেও কিছু বিশেষ মন্দির রয়েছে, যেখানে নিত্য পূজিত হন মহাদেব। অবশ্যই শিবলিঙ্গে আরাধনা। তবে তারই গুরুত্ব অপার।
:আরও শুনুন:
বেলপাতার বদলে তুলসী, রুদ্রাভিষেক নিষিদ্ধ, কোথায় রয়েছে এমন শিবমন্দির?
ঠিক যেমন, জয়পুরের মোতি দুঙ্গরি শিবমন্দির। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মন্দির দেখাশোনার দায়িত্ব রাজ পরিবারের। তাই সাধারণের জন্য সারাবছর মন্দির খোলা থাকে না। কেবলমাত্র শিবরাত্রির দিনেই খোলে এই মন্দির। ভিড় জমে ভক্তদের। এইদিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। দেশের সমস্ত শিবমন্দিরেই অবশ্য এমনটা করা হয়। তবে যে মন্দির সারাবছর সাধারনের জন্য বন্ধ থাকে, সেখানে শিবরাত্রির উদযাপন তো বিশেষ হতেই হয়। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির একলিঙ্গেশ্বর মহাদেবের মন্দির হিসেবেই পরিচিত। শোনা যায়, রাজ পরিবারের প্রতি এই মন্দিরের আরাধ্যের বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। তাই বছরভর নিষ্ঠাভরে দেবাদিদেবের আরাধনা করেন তাঁরা। দেশের আর কোনও মন্দির, বিশেষ করে শিবমন্দির এমন নেই বললেই চলে, যা বছরে মাত্র একদিন খোলা থাকে। সেই হিসাবে জয়পুরের এই মন্দির বিশেষ। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দৈব মাহাত্ম্যের গুণেও মন্দিরটিকে বিশেষ নজরে দেখেন অনেকেই।