শ্রাবণ মাত্রেই শিবের প্রিয় মাস। আর সোমবার মহাদেবের পুজোর জন্য নির্দিষ্ট। তাই শ্রাবণের সোমবার শিবক্ষেত্রে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু শ্রাবনের শেষ সোমবারটি অন্য এক কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এদিন ঠিক কী করলে প্রসন্ন হন মহাদেব? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিবপুজোর কোনও নির্দিষ্ট সময় হয় না। যেকোনও অবস্থায় ভক্তিভরে স্মরণ করলেই কৃপা করেন মহেশ্বর। তবু শ্রাবণের গুরুত্ব কিছুটা হলেও আলাদা। বিশেষত এই মাসের শেষ সোমবার শিবপূজার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শুভ। তবে পুজোর পাশাপাশি এদিন আরও কিছু কাজ করলে বিশেষ তুষ্ট হন মহাদেব।
আরও শুনুন: সামান্য আয়োজনেই হন তুষ্ট, শ্রাবণের সোমবার মহাদেবকে কোন ভোগ দেবেন?
যে কোনও পুজোর ক্ষেত্রেই মনের ভক্তি সারকথা। শিবপুজোর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এক্ষেত্রে যিনি ভক্তের মনে দয়ার উদ্রেক হওয়াও আবশ্যক। শিব জ্ঞানে জীব সেবার মান্যতা দেয় শাস্ত্রও। মূর্তি গড়ে শিবপূজার তেমন প্রচলন না থাকলেও, দেশজুড়ে শিবলিঙ্গে পুজোর চল রয়েছে। মানুষের দ্বারা স্থাপিত হোক অথবা অথবা স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ, সঠিক উপাচারে পূজা করলে যে কারও মুক্তিলাভ হয়। শিবলিঙ্গের দর্শন এবং ভক্তিভরে নমস্কার জানালেও অসীম কল্যাণ হয়। শাস্ত্রমতে শিবলিঙ্গ সর্বতীর্থময়। সকল তীর্থদর্শন, পূজা, দান করেও যে ফল লাভ হয় একবার মাত্র শিবলিঙ্গকে প্রণাম করলে তার থেকে বহুগুণ বেশি ফল লাভ হয়ে থাকে। আসলে শিবের অর্থই হল, যাঁর মধ্যে সারা বিশ্ব নিদ্রিত রয়েছে। লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই, বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। হিন্দুধর্মে, জগতের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়। লিঙ্গপূজার নিয়মও খুবই সাধারণ। গঙ্গাজল আর বেলপাতাতেই শিব তুষ্ট। তবে শ্রাবণের সমবার যেহেতু বিশেষ, তাই এদিন শিবলিঙ্গে আরও কিছু জিনিস অর্পন করা যেতে পারে।
আরও শুনুন: শিবলিঙ্গে জল ঢালার সঠিক নিয়ম জানেন তো? না মানলে রুষ্ট হবেন স্বয়ং মহেশ্বর
এদিন, দুধ দিয়ে শিবের অভিষেক করলে সন্তানলাভের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। কেউ যদি ষোড়োশপচারে পুজো করেন তাহলে যে কোনও কাজে সাফল্য আবশ্যক। তবে সকলের সে সামর্থ নেই। তাই যতটুকু সম্ভব তা দিয়ে পুজো করলেই মহাদেবের আশীর্বাদলাভ করা সম্ভব। এছাড়া বিশেষ উপাদান হিসেবে আখের রস দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানো যেতে পারে। এতে বিশেষ উপকৃত হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। যে কোনও পরীক্ষায় সফলতা মেলে এই কাজ করলে। তবে ভক্তিতে কোনও খামতি থাকলে চলবে না। মহাদেবের পুজোয় ওই একটিমাত্র উপাচার না থাকলে কোনও লাভ নেই। বলা ভালো, স্রেফ মহেশ্বর নন, দেবতা মাত্রেই ভক্তির কাঙাল। তাঁকে উপাচারের আড়ম্বরে ঢেকে ফেলা বোকামি। যদিও শিবপুজো বছরের অন্যান্য দিনও করা যায়। শ্রাবণের সোমবার আরও কিছু কাজ করার বিধান দেন শাস্ত্রজ্ঞরা। যার মধ্যে দানধ্যান করার প্রসঙ্গটি সবার আগে উঠে আসে। এদিন কাউকে পেটভরে খাওয়ালে বিশেষ তুষ্ট হন মহাদেব। সামর্থ অনুযায়ী দান করলেও অবশ্যই বিশেষ ফল মেলে। একইসঙ্গে কোনও পশুপাখিকে কিছু খাবার দিলেও তুষ্ট হন মহেশ্বর।