মাসির বাড়ির আদর খাওয়া শেষ। রথে চড়েই ফের বাড়ি ফিরবেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। কিন্তু শ্রীমন্দিরে ঢোকার অনুমতি মিলবে না সহজে। তার জন্য তিনদিন অপেক্ষা করতে হবেই রথেই। ঠিক কেন এমন নিয়ম? কোন আচার পালন হয় ওই তিনদিন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রথের পরে উলটোরথ। তবেই রথযাত্রার সমাপ্তি। এই উলটোরথকে ঘিরেও আছে নানা উপাচার এবং কাহিনি। এই সময় জগন্নাথদেবের সোনাবেশ দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন ভক্তরা। তবে উলটোরথে ফিরে এসে টানা তিনদিন মন্দিরের বাইরেই অপেক্ষা করতে হয় ত্রিমূর্তিকে। যার নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ কারণ।
:আরও শুনুন:
রথের দিন সুযোগ হয়নি? জীবনে সুখ সমৃদ্ধি পেতে উলটোরথের দিন মেনে চলুন এইসব নিয়ম
আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চেপে গুণ্ডিচা মন্দির গিয়েছিলেন জগন্নাথ। সেখানে এক সপ্তাহ কাটিয়ে একাদশীতে ত্রিমূর্তি ফিরবেন শ্রীমন্দিরে। বলা হয়, রথের মতো উলটোরথের দিনটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এদিন গুণ্ডিচা মন্দির থেকে দক্ষিণ মুখে শুরু হয় পুনর্যাত্রা। কেউ কেউ একে দক্ষিণাভিমুখী যাত্রাও বলে থাকেন। আবার স্থানীয়দের কাছে এর নাম বহুদা যাত্রা। আর বাঙালির কাছে এটাই উলটোরথ। তাই বলে রথকে উলটোদিকে টানা হবে এমন নয়। যে পথে জগন্নাথ মাসির বাড়ি গিয়েছিলেন, সেই পথ ধরেই ফিরে আসবেন। রথের মুখও সেইমতো ঘোরানো হবে। উলটো রথেও ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। নিরাপত্তাও থাকে একইরকম। লাখো ভক্তের মাঝে মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেন প্রভু। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছেই যে রত্নবেদীতে ঠাঁই পাবেন তা নয়। তার জন্য তিনদিন রথেই অপেক্ষা করতে হবে। এই তিনদিন জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে ঘিরে নানা আচার অনুষ্ঠান চলে। কিন্তু ত্রিমূর্তির মন্দিরের বাইরে অপেক্ষা করার কারণ আসলে অন্য।
:আরও শুনুন:
মাসি নন পৌর্ণমাসী! কেন তাঁর কাছেই রথে চেপে যান জগন্নাথ?
প্রভু গুণ্ডিচায় গেলে শ্রীমন্দিরের গর্ভগৃহ হয় শূন্য। একইসঙ্গে দেবী লক্ষ্মীও হয়ে পড়েন একা। এই কদিন প্রভুর সঙ্গে দেখা সাক্ষৎ নেই। তাই জগন্নাথের উপর ভারী অভিমান হয় দেবীর। যদিও প্রচলিত কাহিনি অনুসারে লক্ষ্মীদেবী এর মধ্যেই এক ফাঁকে গুন্ডিচায় গিয়ে দেখে আসেন জগন্নাথকে। সেসব অবশ্য লুকিয়ে। দেবীর সঙ্গে প্রভু জগন্নাথের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা উলটোরথের দিনে। কিন্তু দেবী তো তখন রীতিমতো গোঁসা করে বসে আছেন। তাই ফিরে এসেই মূল মন্দিরে সরাসরি প্রবেশ করেন না জগন্নাথ। তিন দিন থাকেন মন্দিরের বাইরে। ফেরার দিন অর্থাৎ একাদশীতে হয় জগন্নাথের সোনাবেশ। সারা শরীর সোনার আভরণে ভূষিত হয় তাঁর। এক কুইন্টালেরও বেশি সোনার গহনা এই সময় পরানো হয় জগন্নাথদেবকে। সোনাবেশে প্রভুর ডান হাতে থাকে সোনার সুদর্শন চক্র। বাম হাতে থাকে রূপোর শঙ্খ। বলভদ্রের দুই হাতে থাকে সোনার লাঙল আর সোনার গদা। প্রভুর সোনাবেশ দেখার জন্য কাতারে কাতারে ভক্তের সমাগম হয়। পরেরদিন দ্বাদশীতে হয় ‘অধরপনা’। রীতি মেনে এইদিন জগন্নাথকে খাওয়ানো হয় বিশেষ শরবত। তৃতীয়দিনে রসগোল্লা উৎসব। এইদিন রসগোল্লা খাইয়ে দেবী লক্ষ্মীর মান ভাঙান প্রভু। তারপর প্রবেশ করেন শ্রীমন্দিরে। ভক্তরাও সেই আনন্দে একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করান। সবমিলিয়ে উলটোরথের পরের তিনদিনও উৎসবের আমেজ থাকে পুরীতে।