রামকৃষ্ণ ভাবধারাকে অবলম্বন করেই তিনি মানবসেবার আধুনিক উদার বাণী শিখিয়েছিলেন জগৎকে। জগজ্জননী তিনি, মা সারদা। তাঁর বাণী শুধু যে আমাদের আধ্যাত্মিক পথের পাথেয়, তাই-ই নয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কীভাবে ধর্ম বজায় রেখে চলতে সেই গূঢ় বার্তা নিহিত ছিল তাঁর কথায় ও কাজে।
রামকৃষ্ণ ভাবধারাকে অবলম্বন করেই তিনি মানবসেবার আধুনিক উদার বাণী শিখিয়েছিলেন জগৎকে। জগজ্জননী তিনি, মা সারদা। তাঁর বাণী শুধু যে আমাদের আধ্যাত্মিক পথের পাথেয়, তাই-ই নয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কীভাবে ধর্ম বজায় রেখে চলতে সেই গূঢ় বার্তা নিহিত ছিল তাঁর কথায় ও কাজে।
আজ যখন আমরা নানা বিদ্বেষের বশে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন, তখন প্রশ্ন জাগে, কোন পথে এর উপশম হবে? হৃদয়ে প্রেমের উদ্ভাস না হলে তো ঘৃণার পৃথিবী থেকে মুক্তি নেই। সেই প্রেমের জাগরণ তো একদিনে সম্ভব নয়। চাই নিয়ত অনুশীলন। কোন পথে তা সম্ভব? সেই মহামন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছিলেন মা সারদা। ভক্তদের উদ্দেশে তিনি একটা কথা প্রায় বলতেন। বলতেন যে, ‘জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার।’ তিনি নিজেও তো সেই একই কথা বলতেন। যে, তাঁর কাছে কেউ পর নয়। তিনি সকলের মা। উচ্চ-নীচের কোনও ভেদ তাঁর কাছে নেই। তাঁর ভক্তদেরও তিনি এই উদার আকাশই দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। এই জগৎকে যদি কেউ আপন বলে ভাবতে পারেন, তাহলে জগতের মানুষকে কেউ পর বলে ভাববেন না। একের সুখ-দুঃখের সমব্যথী হয়ে উঠবেন অন্যজন। এই শ্রূশুষার কথাই শুনিয়ে গিয়েছিলেন মা সারদা।
আরও শুনুন: শুধু শ্রীরামকৃষ্ণ নন, ‘যত মত তত পথ’ বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণও
ঈশ্বরের আরাধনাকে যেমন তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তেমনই কর্মকেও সমান মর্যাদা দিয়েছিলেন।সমস্ত কাজকর্ম তুলে রেখে কেবল ঈশ্বরের ধ্যান যেমন তিনি করতে বলেননি। তেমনই কাজের ভিড়ে আবার ঈশ্বরকেই ভুলে যাওয়া- এমনটাও প্রার্থিত ছিল না। তাই তিনি বলতেন, ‘কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।’ মানুষের জন্য কাজের মধ্য দিয়েই কর্মের বন্ধন কাটিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা যায়, সরল কথায় সেই পথটিই দেখিয়ে দিয়েছিলেন মা সারদা।
আরও শুনুন: ‘ভক্তদের যেন ভাত কাপড়ের অভাব না হয়’, জগতবাসীর দুঃখ ঘোচাতেই তিনি হলেন সংঘজননী
তবে এতকিছু সত্ত্বেও কি শান্তি আসে? অনেক সময়ই আসে না। আর তাই মায়ের অমূল্য বাণী ছিল, ‘যদি শান্তি চাও, মা , কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের।’ আমরা কথায় কথায় অন্যের দোষ ধরি। অন্যের কথায়-কাজে ত্রুটি আর ছিদ্র খোঁজার চেষ্টা করি। অন্যের দোষ ধরতে ধরতে আমরাও কেবল দোষের সাগরেই তলিয়ে যাই। কিন্তু এভাবে তো কোনও গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। বরং নিজের খামতি, নিজের দোষ কোথায় থেকে যাচ্ছে, তা খুঁজে পাওয়াই আমাদের কাম্য। নিজেকে চিনতে জানলে তবে আত্মদীপ প্রজ্জ্বলিত। উপনিষদের ভিতর সেই আত্মদর্শনের কথাই তো নিহিত। সেই সরল সত্যিটাই তো সকল সন্তানের সামনে তুলে ধরেছিলেন মা সারদা।