স্রেফ পুরুষ নয়। কুম্ভমেলার ভিড়ে মহিলারাও সংখ্যায় কম নন। এঁদের মধ্যে অনেকেই সাধ্বী, সন্ন্যাসিনী, এমনকি নানা সাধুও! একেবারে পুরুষ নাগা সাধুদের মতো তাঁদের জীবন নয়। বরং আরও কঠিন। ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মহাকুম্ভ! দেশের আবেগ। জাতিরও। দলে দলে প্রয়াগে ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা। বিশেষ মুহূর্তে গঙ্গাস্নান সেরে পুণ্য অর্জন করবেন। তবে এতটুকু যথেষ্ট নয়। মেলায় আগত সাধুদের আশীর্বাদও নিতে হবে মনে করে। আলাদা করে খোঁজার প্রয়োজন নেই। মেলাই পা রাখলেই এঁদের দেখা মিলবে। অবশ্য স্রেফ সাধু নন, থাকবেন হাজার হাজার মহিলা নাগা সন্ন্যাসীও।
এমনিতে নাগা সাধু বললেই যে ছবিটা মনে ভাসে, এঁরা হুবহু তেমন নন। এঁদের শরীরে পোশাক থাকে। যদিও তাতে আধুনিকতার চিহ্নমাত্র নেই। কোনও সেলাই করা পোশাক এঁরা গায়ে তোলেন না। গেরুয়া থান গায়ে জড়ান। ওই একটা পোশাকই যথেষ্ট, সারাদিনের জন্য। এছাড়া নাগা সাধুদের মাথায় থাকে বিশাল জটা। এখানেও মহিলারা ব্যতিক্রম, বড় চুল যে সকলের থাকবেই এমন নয়। বরং কারও কারও মাথা ন্যাড়া থাকে। দীক্ষা গ্রহণের সময় এঁদের মস্তক মুণ্ডন করতে হয়। সন্ন্যাসী হওয়া এমনিই কঠিন ব্যাপার, তবে নাগা সন্ন্যাসী হওয়া আরও কঠিন। রোজকার জীবনে পরিবর্তন তো বটেই, মানসিকতাও অনেকটাই বদলাতে হয় এঁদের। সংসার ত্যাগের পাশাপাশি যাবতীয় ভোগবিলাস বিসর্জন দিতে হয়। এবং সেটা যতক্ষণ না গুরুর সামনে প্রমাণ করতে পারছেন, ততক্ষণ সন্ন্যাসী হওয়ার সুযোগ মেলে না। প্রায় ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। তারপর গোপনে নিজের পিণ্ডদান অবধি করতে হয় এই সন্ন্যাসিনীদের।
একদিনে সাধনার এই মার্গে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সময় লাগে। সেই সময়টুকু ধৈর্য্য ধরে ইশ্বরের প্রতি মনোনিবেশ করতে হয়। তবেই মেলে মোক্ষ। কুম্ভমেলায় এঁদের সামনে থেকে দেখা গেলেও অন্যান্য সময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন এঁরা। কখনও কামাক্ষ্যায়, কখনও হরিদ্বারে, কখনও বা হিমালয়ের কোনও অজানা জায়গায় সাধনারত হন এই সাধু এবং সাধ্বীরা। জীবনের যাবতীয় ভোগবিলাস ত্যাগ করে এই পথ এঁরা বেছে নিয়েছেন, সেখানে কোনওভাবেই পিছুটান নেই। পরিবারের সঙ্গেও এঁদের কার্যত যোগাযোগ থাকে না। কেউ কেউ অস্ত্রবিদ্যাও জানেন। তলোয়ার, কৃপানের মতো অস্ত্র সঙ্গেও রাখেন। তবে এই অস্ত্র স্রেফ আত্মরক্ষার তাগিদে। অন্য কাউকে ক্ষতি করার উদ্দেশে নয় মোটেই। কুম্ভমেলায় অস্ত্র নিয়ে খেলাও দেখান অনেক সময় এই সাধুরা। সবমিলিয়ে কুম্ভমেলায় নাগা সাধুদের মতো এঁরাও অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠেন সহজেই।