গায়ের রঙ নীল নয়, সবুজ। রয়েছে পুরুষ্টু গোঁফও। একপাশে মা সীতা। আরেকপাশে মহাদেব। উপরে নীচে আরও অনেক দেবদেবী। কী ভাবছেন কোন দেবতার কথা বলছি? শুনতে অবাক লাগলেও, ইনিও রামচন্দ্র। তবে উত্তরভারতের নয়, একেবারে বাংলার নিজস্ব। কীভাবে শুরু হয়েছিল তাঁর পুজো? আসুন শুনে নিই।
তিনি যুগপুরুষ। তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম। তিনি সীতাপতি রাম। রামনবমীর দিন তাঁর পুজো ঘিরে উন্মাদনায় মেতে ওঠে গোটা ভারতবর্ষই। তবে সেই উৎসবের আমেজে সবথেকে বেশি উদ্বেল হয় উত্তর ভারত। কিন্তু জানেন কি, ওই একই দিনে বাংলাতেও শুরু হয় রামপুজো। তবে তাঁর রূপ প্রচলিত রামের তুলনায় বেশ খানিকটা আলাদা।
আরও শুনুন: ভক্তিভরে শ্রীরামের নাম করলে খুশি হন মহাদেবও, শুনে নিন রামনামের মাহাত্ম্য
বাংলার এই রামপুজো প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো। হাওড়ার রামরাজাতলা এলাকায় তাঁর মন্দির। বলা বাহুল্য, ওই জায়াগার নামও শ্রীরামের নামানুসারেই। তবে তাঁকে রাজা বলেই সম্বোধন করেন এলাকাবাসী। পবিত্র রামনবমী তিথিতেই তাঁর পুজো শুরু হয়। তারপর প্রায় ৪ মাস ধরে চলে মেলা। বাংলার অন্যতম দীর্ঘ মেলা হিসেবেও মনে করা হয় এই মেলাকে। সবার আগে জেনে নেওয়া যাক এই রামের মূর্তি ঠিক কেমন?
প্রথমেই বলতে হয় গাত্রবর্ণের কথা। রামের প্রচলিত মূর্তিতে তাঁর গায়ের রঙ নীল। তবে হাওড়ার এই রামঠাকুরের রঙ সবুজ। রয়েছে পুরুষ্টু গোঁফও। তবে অস্ত্র বলতে ধনুকই দেখা যায় এই মূর্তীতেও। এবার বলতে হয় মূর্তীর উচ্চতার কথা। সম্পূর্ণ মূর্তিটা প্রায় দোতলা বাড়ির সমান। তবে শুধু রাম একা নন। আরও অনেক দেবদেবীর মূর্তী দেখা যায় একইসঙ্গে। অনেকটা এক কাঠামোর দুর্গামূর্তীর মতোই প্রভু রামকে ঘিরে থাকে আরও অনেক মূর্তি। রামের একেবারে বামপাশে থাকেন মা সীতা। বলা বাহুল্য এই মূর্তীতে তাঁর প্রকাশ ঠিক বাংলার লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো। আর ডানপাশে থাকেন মহাদেব। এছাড়াও ব্রহ্মা সহ আরও ২৬টি দেবেদেবীর মূর্তি থাকে এই বিশালাকার রাম ঠাকুরের মূর্তিতে। যার মধ্যে রয়েছেন, জগদ্ধাত্রী, নারদ, হনুমান, মুনি ঋষি আরও অনেকেই। তবে শ্রীরামের মূর্তির ঠিক উপরে থাকে দেবী সরস্বতীর মূর্তি। আকারে ছোট হলেও এই জায়গায় সরস্বতী মূর্তি থাকার এক বিশেষ কারণ রয়েছে। সে প্রসঙ্গে আসছি, তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক এই পুজো কীভাবে শুরু হয়।
আরও শুনুন: ৯ দিন ধরে দেবী দুর্গার ৯ রূপের আরাধনা, নবরাত্রি ব্রতের রয়েছে বিশেষ ফল
কথিত আছে, তখন এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন অযোধ্যারাম চৌধুরী। তাঁরই গৃহদেবতা ছিলেন শ্রীরাম। একদিন তিনি স্বপ্নে প্রভু রামের দর্শন পান। সেই স্বপ্না দিষ্ট রামের আদলেই তিনি এই বিশালাকায় মূর্তি তৈরি করেন তিনি। তারপর হাওড়ার এই অঞ্চলে তাঁর পুজো শুরু করেন। পুজো ঘিরে আরও অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। তবে কথিত আছে, প্রভুর ঠিক মাথার উপর সরস্বতী রাখার নিদান দিয়েছিল স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী। পুজোর সময় দূরদুরান্ত থেকে ভক্তরা এসে ভিড় জমান এই মন্দিরে। রীতিমতো উৎসব চলে কয়েক মাস। তারপর সম্পূর্ণ মুর্তিটিকে বিসর্জ্জন দেওয়া হয়। বিশাল শোভাযাত্রা সহ সেই বিসর্জনও দেখবার মতোই হয়। বছরের অন্যান্য সময় রামরাজাতলার মন্দিরে রামঠাকুরের বিশাল একটি প্রতিকৃতি রাখা থাকে। সেখানেই পুজো দিয়ে যান ভক্তরা। একইসঙ্গে মন্দিরের লাগোয়া হনুমান মন্দিরও রয়েছে। সেখানেও নিত্য পুজোর ব্যবস্থা আছে। সব মিলিয়ে বাংলার এই প্রসিদ্ধ রামঠাকুর নেহাত কম জনপ্রিয় নন।