বিয়ে হয়েছে সদ্যই। স্ত্রী-র সঙ্গে জমিয়ে কেটেছে প্রথম পুজো। কালীপুজো, ভাইফোঁটাও একইরকম আনন্দ করেছেন। কিন্তু ভাইফোঁটার পরেরদিন সকালে দরজা খুলে দেখলেন, নতুন অতিথি হাজির। ছোট্ট একটা কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি, হাতে ঝোলানো একটা চিঠি। বুঝতেই পারছেন কাদের কাজ! কিন্তু কীভাবে বাড়িতেই পুজো করবেন ওই মূর্তি? আসুন শুনে নিই।
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই কালীপুজো। আর তারপর আবার জগদ্ধাত্রী রূপে মর্ত্যে আসেন দেবী। কিন্তু এরই মাঝে ঘুরে যান দেবীর দুই সন্তানও। প্রথমে লক্ষ্মী, তারপর কার্তিক। কাটোয়া বাশবেড়িয়া সহ একাধিক জায়গায় কার্তিক পুজোর ধুম থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্তিক ঘরের ছেলের মতো। সন্তানকামনায় কিংবা সদ্যোজাতের মঙ্গলকামনায় কার্তিক পুজো করেন নবদম্পতি।
আরও শুনুন: দেবতাদের সেনাপতি নয়, বাংলার ঘরে কার্তিকের আদর সন্তানের মতোই
‘কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, একবার আসে মায়ের সঙ্গে একবার আসেন একলা’- বাংলায় অতি প্রচলিত এই প্রবাদটি ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল সেকথা হলফ করে বলতে পারবেন না কেউই। তবু দীর্ঘদিন ধরে বাংলার ঘরে ঘরে সন্তান রূপেই পূজিত হয়ে আসছেন কার্তিক। তাঁর মতো বলিষ্ঠ সুঠাম চেহারার সন্তান যে কোনও সদ্য বিবাহিত দম্পতির একান্ত কাম্য। সেই কার্তিকের অবশ্য জন্ম হয়েছিল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। হর-পার্বতীর যোগ মিলনে সৃষ্টি হওয়া দেব সেনাপতি তারকাসুরকে বধ করে দেবলোককে রক্ষা করেন। পরিচিত হন দেব সেনাপতি হিসেবে। কিন্তু বাংলায় কার্তিকের সেই পরিচয় খাটে না। তিনি কোথাও খোকা কার্তিক, কোথাও জামাই কার্তিক আবার কোথাও রাজা কার্তিক। যদিও বাংলার ঘরে ঘরে তাঁর সন্তান রূপেরই পুজো হয়। এক্ষেত্রে আরও একটা প্রচলিত নিয়ম হল কার্তিক ফেলা। সাধারণত যাঁর বাড়িতে কার্তিক পুজো হবে, তিনি প্রথমবার নিজে থেকে বিগ্রহ কেনেন না। বন্ধু স্থানীয় কেউ না জানিয়ে বাড়ির সামনে কার্তিক বিগ্রহ রেখে যান। তারপর সেই বিগ্রহ বাড়িতে এনে পুজো করতে হয়। এবং একবার কার্তিক পুজো করলে, অন্তত তিনবছর সেই পুজো চালাতে হয়। তবে বাড়িতে এই পুজো করাও বিশেষ কঠিন কিছু নয়।
আরও শুনুন: পক্ষীকুলে শ্রেষ্ঠ বলেই কি দেবসেনাপতির বাহন হল ময়ূর?
উপকরণ খানিকটা লক্ষ্মী পুজোর মতোই। প্রথমেই পুজোর উপকরণের একটি ফর্দ তৈরি করে নিন। ফর্দে থাকতেই হবে বেশ কয়েকটি জিনিস। সেগুলি হল সিঁদুর, অধিবাস ডালা, তিল, হরিতকী, ঘট, পৈতে, একসরা আতপ চাল। লাগবে ১টি ঘটাচ্ছাদন গামছা, ১টি কুণ্ডহাঁড়ি, ১টি তেকাঠি, ১টি দর্পণ, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, ১টি সশীষ ডাব, ৪টি তীর, পুষ্প, দুর্বা। এর সঙ্গে লাগবে ৩টি আসনাঙ্গুরীয়ক, মধুপর্কের ৩টি বাটি, দই, মধু, গব্যঘৃত, চিনি, কার্তিকের ধুতি, ময়ুরের ধুতি, গামছা। হোম করতে চাইলে, বালি, কাঠ, খোড়কে, ঘি এক পোয়া, সমিধ ও অন্তত ২৮টি বেলপাতা যোগাড় করে রাখুন। নৈবেদ্য নিজের ইচ্ছামতো সাজানো যেতে পারে। তবে প্রতি থালায় অন্তত তিনটি ফল এবং একটা মিষ্টি থাকা আবশ্যক। অন্তত ৬ টি থালায় সাজাতে হবে সেই ফল ও মিষ্টি। যা উতসর্গ করা হবে, লক্ষ্মী-নারায়ণ, শিব-দুর্গা, পঞ্চ দেবতা, নবগ্রহ, গুরুদেব এবং কার্তিককে। একটি থালায় শুধুমাত্র মিষ্টি সাজানো যেতে পারে। এছাড়া ব্রাহ্মণকে দানের জন্য একটা থামায় কিছু সবজি, চাল-ডাল,ঘি এসব সাজিয়ে রাখুন। এছাড়া কার্তিক পুজো কিছু খেলনা রাখাও আবশ্যক। তবে পুজোর দায়িত্ব কোনও শাস্ত্রজ্ঞ পুরোহিতকে দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে যদি উদযাপনের পুজো হয় সেক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ থাকা আবশ্যক বলা যায়। কার্তিকের মন্ত্র বলতে ধ্যান মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র এবং বীজ মন্ত্র। যা একেবারেই সর্বসমক্ষে বা সকলের সামনে বলা উচিত নয়। তবে জোগাড় করা থাকলে পুজোর অর্ধেক কাজ সেখানেই উতরে যায়। তাই বাড়িতে কার্তিক এলে নিয়ম মেনে জোগাড়টুকু সেরে রাখুন। আড়ম্বরের সামর্থ্য না থাকলে কোনও প্রয়োজন নেই। যে কোনও পুজোতেই মনের ভক্তি সারকথা। তাই সন্তান কামনাই হোক, বা তার মঙ্গলকামনা, ভক্তিভরে কার্তিক পুজো করলে অবশ্যই ফল মেলে।