তিনি প্রযুক্তিবিদ্যার দেবতা। উপবেদ, স্থাপত্যবেদ ও চতুঃষষ্টিকলার প্রকাশক। প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে হয় বিশ্বকর্মা পুজো। তবে অন্যান্য পুজোর মতো বিশ্বকর্মা পুজোরও কিছু বিধি বিধান রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে কিছু চিরন্তন প্রথাও। ঘুড়ি ওড়ানো যার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোতেই কেন ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে? আসুন শুনে নিই।
তিনি নির্মাণের দেবতা। সমগ্র বিশ্ব নির্মাণ করেছিলেন বলেই তাঁকে ডাকা হয় বিশ্বকর্মা নামে। বিভিন্ন দেবতাদের অস্ত্র থেকে আরম্ভ করে সোনার লঙ্কাও তাঁরই কীর্তি। কথিত আছে, যুগে যুগে ভূভারতের যতরকম সুন্দর নির্মাণশৈলী তৈরি হয়েছে, সবটাই নির্মাণ করেছেন বিশ্বকর্মা। এই দেবতার হাত ধরেই ধরিত্রীতে পুষ্পক বিমান, দ্বারকা নগর, যমপুরী, কুবেরপুরী নির্মিত হয়েছে। রামায়ণে বর্ণিত অপূর্ব শোভা ও সম্পদবিশিষ্ট লঙ্কা নগরীর নির্মাতাও বিশ্বকর্মা বলেই কথিত।
আরও শুনুন: রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় দেশ জুড়ে জ্বলবে প্রদীপ, ৫ লক্ষ গ্রামে শৌর্য যাত্রার আয়োজন বজরং দলের
তাই যে কোনও নির্মানশিল্পে তাঁর স্মরণ আবশ্যক। প্রতিবছর ধূমধাম করে বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনও করেন তাঁরাই, যারা প্রকৃত অর্থেই খেটে খাওয়া মানুষ। দিনরাত হাতুড়ি আর করাত নিয়ে যাদের কাজ, সেইসব সর্বহারাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। তাই তাঁর পুজো ওইসব মানুষের কাছে উৎসবের মতোই। যে কোনও কারখানায় বেশ ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজোর চল রয়েছে। এছাড়া কোনও যন্ত্রপাতির দোকান কিংবা পরিবহন দপ্তরেও পুজো হয় দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার। প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন নিয়ম করে যানবাহনও পুজো করেন অনেকেই। বিশ্বাস, সারা বছর কোনও দুর্ঘটনার থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন দেবশিল্পী। অনেকে আবার বাড়িতেই তাঁর পুজোর ব্যবস্থা করেন। তবে সেক্ষেত্রে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখা আবশ্যক। যেমন, বিশ্বকর্মা পুজোয় দীপ, ধুপ, জল ও পৈতে লাগবেই। এছাড়াও পুজোর সামগ্রীতে অবশ্যই থাকা চাই চন্দন, পরামর্শ জ্যোতিষবিদদের। এবং অন্য পুজোর মতোই ফুল দিয়ে দেবতার আরাধনা করতে হবে। এক্ষেত্রে জ্যোতিষবিদরা দেবতাকে সাদা ফুল অর্পণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাড়িতে থাকা যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত, মনে করেন শাস্ত্রজ্ঞরা। যেমন, ইলেকট্রিকের কাজে লাগে, এমন সরঞ্জাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা বাঞ্ছনীয়। যন্ত্রপাতিগুলিকে অয়েলিং করে, ধুয়েমুছে রাখা উচিত। এর ফলে এইসব যন্ত্রপাতি ভালও থাকে সারা বছর। ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে সুবিধা হয়।
আরও শুনুন: একটি লাড্ডুর দাম ২৪ লক্ষ টাকা! গণেশ পুজোর ‘বিরল’ প্রসাদ ঘিরে শোরগোল হায়দরাবাদে
কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর চল এল কীভাবে?
এর নেপথ্যেও রয়েছে এক পৌরাণিক বাখ্যা। শাস্ত্রমতে দেবদেবীর অস্ত্র থেকে আরম্ভ করে স্বর্গলোকের অধিকাংশ নির্মানই বিশ্বকর্মার কির্তী। মনকি তিনিই নাকি সর্বপ্রথম উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। তারই প্রতীক হিসেবে তাঁর পুজোর দিনে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয় বলে মনে করা হয়। এমনটাও মনে করা হয়, এইদিন ঘুড়ি ওড়ালে খুশি হন দেবশিল্পী নিজেও। তবে এ তো গেল পৌরাণিক ধারণা। সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে ছুটি উপভোগ করতেই ঘুড়ি ওড়ানোর চল। আসলে ঘুড়ি মুক্তির প্রতীক। হাড় ভাঙা পরিশ্রম বা মালিক শ্রেণির চোখ রাঙানি, এইদিন সেসবের বালাই নেই। তাই মনের আনন্দে ঘুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সেই খেটে খাওয়া মানুষের দল। আর সেই থেকেই চালু হয়েছে এই নিয়ম। সেইসঙ্গে মিশেছে পুজোর আনন্দ। সব মিলিয়ে প্রতি বছর মহা সমারোহে পালিত হয়ে আসছে এই বিশ্বকর্মা পুজো।