শ্রীরামের একনিষ্ঠ ভক্ত। বুক চিরে প্রভু রাম ও মাতা সীতার নাম দেখিয়েছিলেন পবননন্দন হনুমান। তাঁর বন্দনাই হনুমান চালিশা। কথিত আছে, এই হনুমান চালিশা পাঠ করলে ভক্তকে যে কোনও বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন বজরংবলি। যার প্রমাণ পেয়েছিলেন মোগল সম্রাট আকবরও। কেমন সেই কাহিনি? আসুন শুনে নিই।
একলাফে পার করেছিলেন সমুদ্র। আস্ত পাহাড় তুলে এনেছিলেন প্রভুর আদেশে। রামায়নে ভক্তশ্রেষ্ট হনুমানকে নিয়ে ঘটনার অন্ত নেই। সেই পবনন্দনের স্তবগাথাই হল হনুমান চালিশা। তুলসীদাস রচিত এই বিশেষ শ্লোক রোজ পাঠ করার নিদান দেন সনাতনী হিন্দুরা। এতেই নাকি দূর হয় যে কোনও বিপদ। খোদ তুলসীদাসের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে তেমন এক ঘটনা।
আরও শুনুন: বন্দিদের মন বদলাবে হনুমান চালিশা পড়লেই, নয়া পদক্ষেপ যোগীরাজ্যে
দেশজুড়ে হনুমান মন্দিরের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এক্ষেত্রে উত্তর দক্ষিণের প্রতিযোগিতাও অপ্রাসঙ্গিক। দেশের দুই প্রান্তেই রয়েছে হনুমানের একাধিক মন্দির। অনেকেই দাবি করেন হনুমানের জন্ম দক্ষিণে। আবার উত্তরের একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রামায়নের বাস্তব নিদর্শন। তাই সর্বত্রই হনুমান বিরাজমান। তবে হনুমান চালিশায় উল্লেখ মেলে, বজরংবলিকে স্মরণের জন্য আলাদা কোনও মন্দিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মনে বিশ্বাস রেখে ভক্তিভরে তাঁকে স্মরণ করলে যে কোনও জায়গায় তিনি প্রকট হতে পারেন। এবং ভক্তকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। আর সেই প্রমাণ পেয়েছিলেন স্বয়ং তুলসীদাসও। রামচরিতমানস রচনার মাধ্যমে হিন্দু সমাজে তুলসীদাস পরিচিত পান। সেইসময় সকলেই তাঁকে রামভক্ত হিসেবে চিনত। অনেকেই মনে করতেন, তুলসীদাসের ডাকে সাড়া দেন প্রভু রামও। এই খবর পৌঁছয় মোগল সম্রাট আকবরের কানে। তিনিও পরখ করে দেখতে চান সত্যি সত্যি তুলসীদাসের ডাকে রাম সাড়া দেন কি না।
আরও শুনুন: জগন্নাথকে ছেড়ে যাওয়া বারণ, সোনার শিকলে বাঁধা পুরীর এই মন্দিরের হনুমান বিগ্রহ
আকবর নিজের সভায় ডেকে পাঠান কবিকে। এবং আদেশ করেন রামের দর্শন করানোর। আদেশ শুনে তো তুলসীদাস মহা বিপদে পড়েন। এইভাবে কী আর রামের দর্শন মেলে। তিনি কাতর কন্ঠে সম্রাটকে বলেন, ভক্তিভরে রামকে ডাকলে তিনি দেখা দেবেন, কিন্তু এইভাবে রামের দর্শণ সম্ভব নয়। আকবরও এই দাবি মানতে নারাজ। উলটে ভয়ানক চটে গিয়ে তুলসীদাসকেই বন্দী করার নির্দেশ দেন। অসহায় কবির ঠাঁই হয় অন্ধকার গারদে। কিন্তু সেখানে বসেই তিনি একমনে রাম নাম জপতে শুরু করেন। শোনা যায়, ওই সময়ই তুলসীদাস হনুমান চালিশা রচনা করেন। আর তারপরই ঘটে ম্যাজিক। কথিত আছে, হনুমানের নাম গাথায় চল্লিশতম শ্লোকটি লেখা মাত্র আকরবরের রাজপ্রাসাদে হুলস্থূল বেধে যায়। কোত্থেকে একপাল বানর এসে দাপাদাপি শুরু করেন গোটা প্রাসাদ জুড়ে। তাদের যত তাড়ানোর চেষ্টা করেন আকবর, ততই সংখ্যায় বাড়তে থাকে বানর। এক সময় তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। রামভক্ত তুলসীদাসকে আটকে রেখেই এমন বিপদে পড়েছেন আকবর। তক্ষনি তিনি কবিকে মুক্ত করার নির্দেশ দেন। আর ঠিক তারপরই থেমে যায় বানরের তাণ্ডব। এই ঘটনা অল্পদিনের মধ্যেই সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। একইসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে হনুমান চালিশার মাহাত্ম্য।