মা ভবতারিণীর ভুনমোহিনী রূপ দেখে মুগ্ধ হন না, এমন মানুষ বিরল। দক্ষিণেশ্বর মন্দির আলো করে আছে মায়ের মূর্তি। কিন্তু জানেন কি কোন ভাস্কর নির্মাণ করেছিলেন এই আশ্চর্য সুন্দর প্রতিমা? আসুন শুনে নিই তাঁর কথা।
রানি রাসমণি যাবেন কাশীতে, দেবী অন্নপূর্ণাকে পুজো দিতে। সেইমতো প্রস্তুতি নেওয়া হল। লোকলস্কর নিয়ে রানিমা যেদিন যাত্রা করবেন, ঠিক তার আগেরদিনই মিলল স্বপ্নাদেশ। দেবী জানালেন, কাশী যাওয়ার দরকার নেই। গঙ্গাতীরেই একটি মন্দির নির্মাণ করে রানিমা যেন তাঁকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেই তিনি পূজা গ্রহণ করবেন। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরই রানিমা মন্দির তৈরি করবেন মনস্থ করেন। শুরু হয় পরিকল্পনা। যার ফল দক্ষিণেশ্বরের অপূর্ব সুন্দর মন্দির।
আরও শুনুন: দুর্গাপুজো করতে সাহেবদের সঙ্গে মামলা লড়েছিলেন রানি রাসমণি
এই মন্দিরেই পূজিতা দেবী ভবতারিণী। মায়ের এই অনন্য মূর্তিটি গড়েছিলেন দাঁইহাটের শিল্পী নবীন ভাস্কর। মন্দির নির্মাণের কাজ যখন শুরু হয় তখনই ভাস্করের খোঁজ শুরু করেন রানিমা। আর যোগাযোগ হয় নবীনের সঙ্গে। তিনি তখন সদ্যযুবা। অবশ্য পারিবারিক সূত্রেই এই মূর্তি নির্মাণের কলাকৌশল ছিল তাঁর আয়ত্তে। রানিমার থেকে বরাত পেয়ে বাবার তৈরি করা স্টুডিওতে কাজ শুরু করে দেন নবীন। একেবারে নিয়ম মেনে, শুদ্ধাচারে তিনি এই মূর্তি গড়ার কাজ করতেন বলে জানা যায়। একসময় কাজ শেষ হয়। রানিমার সে মূর্তি পছন্দও হয়। তবে মন্দিরের গর্ভগৃহের সঙ্গে ঠিক ঠিক মাপে মিলছিল না। রানিমার ইচ্ছায় পুনরায় মূর্তি নির্মাণ শুরু করেন নবীন। এবারের মূর্তিটি আবার একটু বড় হল গর্ভগৃহের মাপে। ফলে, তৃতীয়বার কাজ শুরু করলেন নবীন। এই তৃতীয় মূর্তিটিই প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দিরে, আমরা সেই বিগ্রহটিই দর্শন করি। অপর দুই মূর্তিও অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে পূজতা হন। অর্থাৎ, মা ভবতারিণীর আদলে আরও দুই মূর্তি আছে, তবে তাঁরা পূজিতা হন অন্য নামে। রানিমার উইল অনুযায়ী দক্ষিণেশ্বরের এই কালীমূর্তির নাম জগদিশ্বরী। শোনা যায় নবীন ভাস্করই মায়ের নাম দিয়েছিলেন – ভবতারিণী।
আরও শুনুন: কালী কি কালো! এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ?
ভবতারিণী মূর্তি নির্মাণের পর সারা দেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। বলা যায়, একসময় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্করের খেতাব ছিল তাঁরই দখলে। যে অপূর্ব মূর্তি দেখে আমরা আজও আপ্লুত হই, তাই-ই জানিয়ে দেয় কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন নবীন ভাস্কর।