শ্রাবণ শিবপূজার মাস। ভক্তগণ এই মাসে পালন করেন ব্রত, জল ঢালেন শিবলিঙ্গে। এ তো আমাদের চেনা রীতি, পুরনো প্রথা। কেন শিবলিঙ্গে জল ঢালি আমরা? তার ফলাফলই বা কী? সেই আখ্যান শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা রয়েছে- “যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।”
অর্থাৎ যখন আলো ছিল না, অন্ধকারও ছিল না; দিন ছিল না, রাত্রিও ছিল না; সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন। শিবের ক্ষেত্রে বলা হয় “শিব এব কেবলঃ”। সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন। তিনিই লীলাচ্ছলে ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপ ধারণ করে পালন করেন আবার রুদ্ররূপ ধারণ করে সংহার করেন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-হর তারই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের তিনটি রূপভেদ মাত্র। তাই এই তিন রূপের মধ্যে সত্বার কোন পার্থক্য নেই। তবু সনাতন রূপ পরম শিবরূপই মূলস্বরূপ।
এহেন সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে সর্বোৎকর্ষ, অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়। ব্রহ্ম স্বরূপে পরমাত্মা শিব বিন্দুর ন্যায় অর্থাৎ নিরাকার, এই অবস্থায় শিবকে কল্পনাও করা যায় না, তিনি কালচক্র ও সংসারের সকল গুণ-অগুণ এর উর্দ্ধে। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক; এই কারণে শিবলিঙ্গ শব্দটির অর্থ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক।
আরও শুনুন: Spiritual: শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কোথা থেকে? এর অর্থ কী?
শিব শব্দের অপর একটি অর্থ হল যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে। লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই – বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। হিন্দুধর্মে, জগতের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়।
শাস্ত্রে বাণলিঙ্গের কথা রয়েছে। এই বাণলিঙ্গের ওপর সমস্ত দেবতাদের পূজার্চনা সম্ভব। বাণলিঙ্গ আবির্ভাব হল কী করে এই বিষয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। পুরাকালে বাণ নামের এক অসুর ছিল। সে ছিল খুবই শিবের ভক্ত। সে রোজই ভক্তি সহযোগে শিবের পূজা অর্চনা করত। দীর্ঘকাল এইভাবে ভক্তিভরে পূজার্চনার পর একদিন দেবাদিদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে দর্শন দিলেন। বরপ্রদান করতে চাইলেন। বাণাসুর অত্যন্ত আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার আরাধ্য দেবাদিদেবকে বলল, ‘প্রভু প্রতিদিন আপনার পূজার জন্য লিঙ্গ তৈরি করতে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনি আমার ওপর কৃপা করে, আমাকে সুলক্ষণযুক্ত শিবলিঙ্গ দান করুন যাতে আমি মনের আনন্দে আপনার যথাবিহিত পূজা করতে পারি’। বাণাসুরের কথায় প্রসন্ন হয়ে দেবাদিদেব প্রসন্ন হয়ে তাঁকে সুলক্ষণযুক্ত চোদ্দ কোটি শিবলিঙ্গ প্রদান করলেন। বাণাসুর সেইসব লিঙ্গ নিয়ে জগতের মঙ্গলকামনায় নানা জায়গায় স্থাপন করতে লাগল। শ্রীশৈলে তিন কোটি, কন্যাশ্রম, কন্যাতীর্থ, মহেশ্বরক্ষেত্র, মহেন্দ্র পর্বত, নিউয়ারে এক কোটি এবং অবশিষ্ট অক্ষয় লিঙ্গগুলি অন্যান্য স্থানে স্থাপন করল।
আরও শুনুন: Spiritual: গুরুপূর্ণিমার প্রচলন হল কীভাবে?
শাস্ত্রে বলে, যে কোনও শিবলিঙ্গ সে মানুষের দ্বারা স্থাপিত হোক অথবা অথবা স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ হোক সঠিক উপাচারে পূজা করলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। শিবলিঙ্গের দর্শন এবং ভক্তিভরে নমস্কার জানালে মানুষের অসীম কল্যাণ হয়। শিবলিঙ্গ সর্বতীর্থময়। সকল তীর্থদর্শন, পূজা, দান করেও যে ফল লাভ হয় একবার মাত্র শিবলিঙ্গকে প্রণাম করলে তার থেকে বহুগুণ বেশি ফল লাভ হয়ে থাকে।
বাকিটা শুনে নিন প্লে বাটন ক্লিক করে।