মনকে সংযত করে ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগস্থাপন খুব কঠিন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আমাদের অবস্থা একটি চঞ্চল বানরের মতো। মনের অপবিত্রতাই মনের চঞ্চলতার কারণ। তার সঙ্গে রয়েছে আমাদের আহারের সম্পর্ক। আহার শুধুমাত্র খাদ্যগ্রহণ অর্থেই নয়, আমাদের ইন্দ্রিয়ের আহার অর্থেও। আমাদের প্রয়োজন আহারশুদ্ধি’র। কি এই আহারশুদ্ধি! কি ভাবেই বা আমরা মনের চঞ্চলতার হাত থেকে মুক্তি পাবে! সে কথা শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
এক বানর ছিল, স্বভাবতই চঞ্চল— যেমন সব বানর হয়ে থাকে। ওই স্বাভাবিক অস্থিরতা বোধহয় যথেষ্ট ছিল না। একজন লোক বানরটাকে খানিক মদ খাইয়ে দিল, তাতে সে আরও খানিক চঞ্চল হয়ে উঠল। তারপর তাকে এক বিছে কামড়াল। বিছে এত বিষাক্ত এক প্রাণী, যে কোনও প্রাণীকে কামড়ালেই সে সারাদিন বিষের যাতনায় ছটফট করবে। বানর তাই করতে লাগল। বানর বেচারার দূরাবস্থার চূড়ান্ত হল। তার দুঃখের মাত্রা বোধহয় তখনও খানিক বাকি ছিল। এরপর এক ভূত বানরের মধ্যে প্রবেশ করল। একেই বিষের জ্বালা সঙ্গে ভূতের অবস্থান দুইয়ে মিলে বানরের যে দুর্দমনীয় চঞ্চলতা দেখা দিল, সে অবস্থায় ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব।
স্বামীজির ভাষায়, মানুষের মন ওই দূরবস্থায় ভোগা বানরের মত। অবিরত ক্রিয়াশীল। আবার বাসনারূপ মদিরাপানে মত্ত হলে তার অস্থিরতা চূড়ান্ত বৃদ্ধি পায়। যখন বাসনা এসে মনকে অধিকার করে তখন অপর মানুষের সফলতা-দর্শনে ঈর্ষারূপ বৃশ্চিক তাকে দংশন করতে থাকে। শেষে আবার যখন অহংকাররূপ পিশাচ তার মধ্যে প্রবেশ করে। তখন সে নিজেকে বড় বলে মনে করে। এরকম মনকে সংযত করা যথেষ্ট কঠিন।
আরও শুনুন: Spiritual: দানের কথা বলেন মহাপুরুষগণ, কীরকম দানে পুণ্য লাভ হয়?
এই দুরন্ত চঞ্চল মনকে তাহলে শান্ত করতে গেলে কি করতে হবে?
স্বামীজির মতে মনের চঞ্চলতার কারণ, তার অপবিত্রতা। তাঁর মতে, মন যত পবিত্র হবে, তা সংযত করা তত সহজ হবে। মনসংযমের জন্য যদি আমরা অক্লান্ত পরিশ্রমও করি, কিন্তু আমাদের জীবনবোধ না বদলাই তাহলে সেই পরিশ্রমে কোনও লাভ হবেনা। আবার যদি অশুদ্ধ মনকে শুদ্ধ করার কোনও চেষ্টা না করেই মনসংযমের চেষ্টা করি তাহলে তাতেও সফল হব না।
মনের এই অপিবত্রতাগুলি আসলে কী? সেগুলি হল- পরশ্রীকাতরতা, ঘৃণা, ক্রোধ, ঈর্ষা, ভয়, আত্মভাব, বাসনা, মোহ ইত্যাদি। এইগুলি আমাদের জীবনে নানারূপে প্রকাশ পায়। এদের থেকে জন্ম হয় তমো এবং রজোগুণের।
তাহলে কীভাবে মন থেকে এই অপবিত্রতা দূর করা যায়?
আরও শুনুন: Spiritual: জগতে চণ্ডীপাঠের মাহাত্ম্য প্রচার করলেন কে?
মনকে সরবরাহ করতে হবে পুষ্টিকর খাদ্য। তাতে ধীরে ধীরে মনের মধ্যের অপবিত্রতা কাটে। আমরা যেমন খাদ্য গ্রহণ করি। প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি অন্ন। এই অন্ন ত্রিবিধ রূপে আমাদের মধ্যে পরিণত হয়। উপনিষদ্-এ বর্ণিত রয়েছে, অন্নের মধ্যে স্থূলতম অংশ পরিণত হয় মলে, মধ্যমাংশ মাংসে এবং সূক্ষ্মতম অংশ পরিণত হয় মনে। এই জন্য উপনিষদ্ বলে, ‘মন অন্নময়’। ঠিক যেমন দই মন্থন করার সময়ে, তার মধ্যে যে সূক্ষ্ম অংশ সেটা ওপরে উঠে এসে ঘি-তে পরিণত হয়। ঠিক তেমনই ভক্ষ্যমান অন্নের সূক্ষ্মাংশ, ওপরে উঠে আসে, পরিণত হয় মনে।
আহার শুদ্ধি হলে তাই সত্ত্বশুদ্ধি হয়, সত্ত্বশুদ্ধি হলে স্মৃতি হয় নিশ্চলা, স্মৃতি লাভ হলে অবিদ্যার মত যা কিছু সেসব হৃদয়গ্রন্থি থেকে নষ্ট হয়।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।