দীপাবলিতে কালীপুজো হয় বাংলায়। এই দিনে লক্ষ্মীপুজো হয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে অনেক বাঙালি ঘরেও এদিন লক্ষ্মীপুজোর প্রথা প্রচলিত। দীপাবলিতে যে লক্ষ্মীপুজো হয়, তাকে বলা হয় দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজো। এই পুজোয় গৃহস্থ ঘর থেকে অলক্ষীকে বিদায় করে লক্ষ্মীকে বরণ করে নেয়। সম্পদের দেবীকে পুরোহিত ছাড়াও বিধি মেনে পূজা করা সম্ভব। শুনে নিন কীভাবে দীপান্বিতা লক্ষ্মীর আরাধনা করলে দেবীর কৃপা পাবেন।
শাস্ত্র অনুযায়ী সবার আগে ঘর পরিষ্কার রাখুন। অপরিচ্ছন্নতা একদমই পছন্দ নয় লক্ষ্মী দেবীর। মনে করা হয়, যে স্থান নোংরা, অপরিষ্কার সেখানে লক্ষ্মীর চরণ পড়ে না। তাই দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোর আগে ঘর ভাল করে পরিষ্কার করা জরুরি। শেষে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিন পূজাস্থান। এরপর ঘরের যেখানে পুজো করবেন, সেই স্থানে পুজোর আসন পাতুন। নিচু টেবিল বা পিঁড়ির ওপর পরিষ্কার লাল সুতির কাপড় পেতে সেখানে কয়েক দানা শস্য ছড়িয়ে দিন।
যেখানে শস্য ছড়িয়েছেন, তার মাঝামাঝি একটি রুপো বা তামার কলস স্থাপন করাই নিয়ম। ওই কলস জল ভরুন। সম্পূর্ণ ভরবেন না। এবার কলসের মধ্যে দিন একটা গাঁদাফুল, একটা সুপারি, একটা কয়েন এবং কয়েক দানা চাল। শেষে কলসের মুখের ওপরে রাখুন একটি আম্রপল্লব। পুজোর জন্য নির্দিষ্ট আসনের মাঝখানে রাখুন লক্ষ্মীর মূর্তি। কলসের ডান দিকে রাখুন গণেশের মূর্তি। একটা ছোট থালায় চূড়ো করে কিছুটা চাল দিন, পাশে কিছুটা হলুদ গুঁড়ো দিন। ওই হলুদ গুড়ো দিয়ে একটা পদ্মফুল আঁকুন। থালায় কয়েকটা এক টাকার কয়েন রাখুন। পুজোর এই থালাটি লক্ষ্মী দেবীর মূর্তির সামনে স্থাপন করুন। এরপর লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তি বা ছবিতে তিলক কেটে সামনে একটা প্রদীপ জ্বালান। তিলক দিন কলসের গায়েও।
আরও শুনুন: ভুল করলেই বাড়বে বিপদ, জানেন কীভাবে পুজো করলে তুষ্ট হন শনি দেব?
এবার ভক্তি ভরে প্রণাম করে লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তির পায়ের কাছে ফুল নিবেদন করুন। আপনার হাতেও কিছু ফুল নিন। হাতে ফুল নিয়ে হাত জোড় করে চোখ বন্ধ করে পুজোর মন্ত্র উচ্চারণ করুন। মন্ত্রপাঠের পর লক্ষ্মী ও গণেশের পায়ে ওই ফুল নিবেদন করুন। ফুল নিবেদনের পরে রয়েছে জল নিবেদন পর্ব। প্রথমে লক্ষ্মীর দেবীর মূর্তিকে জল দিয়ে স্নান করান। এরপর লক্ষ্মী মূর্তির সারা গায়ে পঞ্চামৃতের প্রলেপ দিয়ে আবার জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। পরিচ্ছন্ন সুতির কাপড় দিয়ে মূর্তি পরিষ্কার করে ফের যথাস্থানে দেবতাকে স্থাপন করুন।
এরপর বিধি মতো মূর্তিতে হলুদ, কুমকুম এবং চালের তিলক লাগান। এই কাজ হলে মালা নিবেদন করুন দুটি মূর্তিতে। ধূপকাঠি জ্বালিয়ে দিন। অন্তিম প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে দেবতাকে ফল ও মিষ্টি নিবেদন। লক্ষ্মীদেবীকে নারকেল, সুপারি এ পানপাতা নিবেদন করুন। এর পর ফল ও মিষ্টি দিতে হবে। কিছু ফুল ও কয়েকটা কয়েন মূর্তির সামনে রাখুন। সব শেষে একটি থালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে নিয়ে লক্ষ্মীর আরতি সম্পন্ন করুন।
আরও শুনুন: প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজোয় এই নিয়মগুলো পালন করুন, অসীম কৃপা পাবেন দেবীর
লক্ষ্মীদেবী হলেন সম্পদের দেবী। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর মতোই দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোতেও শাস্ত্র মেনে পুজো করলে বিদায় হবে অলক্ষ্মী, কৃপা পাবেন দেবীর। সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে জীবনে।