যে কোনও খাবার খাওয়ার আগে ঈশ্বরের নাম নিতে হয়। তাঁর দাক্ষিণ্যেই যে খাদ্য গ্রহণের সুযোগ হয়েছে। তাই কোনও মন্দির বা মঠে অবশ্যই খাদ্যগ্রহণের পূর্বে দেবতাকে স্মরণের নিয়ম রয়েছে। শুধু হিন্দু ধর্মে নয়, যে কোনও ধর্মেই এই নিয়ম মানা হয়। সেই ঈশ্বর প্রসঙ্গেই উঠে আসে কিছু বিধিনিষেধের কথা। শাস্ত্রমতে সপ্তাহের সাত দিন নির্দিষ্ট কিছু-না-কিছু খাবার খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কী বলা হয়েছে সেখানে? আসুন শুনে নিই।
জীবমাত্রেই ঈশ্বরের সৃষ্টি। তাই তার লালল-পালনের দায়িত্বও তিনিই সামলান। এমনটাই নির্দেশ করে একাধিক শাস্ত্র। সনাতন হিন্দুমতও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই যে কোনও কাজ শুরু করার আগেই ঈশ্বরের নাম নেওয়ার বিধান দেয় শাস্ত্র। এমনকি খাদ্য গ্রহণের আগেও ভগবানকে স্মরণ করা আবশ্যক। এমনটাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে একাধিক শাস্ত্রকথায়। সেই প্রসঙ্গেই উল্লেখ রয়েছে কিছু বিধিনিষেধের কথাও। সপ্তাহে সাত দিন নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলার বিধান দেন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরা।
আরও শুনুন: উপোসে অসুবিধা! নির্জলা একাদশীতে কী করলে মেলে বিশেষ ফল?
প্রথমেই আসা যাক সোমবারের কথায়। শাস্ত্রমতে এইদিন শর্করা জাতীয় দ্রব্য ভক্ষণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সোমবার খাদ্যতালিকায় মিষ্টি বা চিনি না রাখাই বাঞ্চনীয়। যার কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে চন্দ্রদেবের। সোমবার তাঁর দিন। আর চন্দ্রদেবের প্রিয় প্রসাদ শর্করা দ্রব্য। তাই চন্দ্রদেবকে উতসর্গ না করে এইদিন কোনও মিষ্টি খাওয়া উচিত নয়। এরপর মঙ্গলবার। এই দিন মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে সমর্পিত। তিনি অগ্নিস্বরূপ। তাঁর শরীরে সর্বদা অগ্নি বিচ্চুরিত হয়। তাই এইদিন খাদ্য তালিকায় ঘি না রখাই বাঞ্চনীয়। মনে করা হয়, এতে মঙ্গলের প্রভাব আরও জোরালো হয়। যা অনেক ক্ষেত্রেই বিপদ ডেকে আনতে পারে। বুধবার সেই অর্থে বিশেষ কোনও খাদ্যদ্রব্যে বিধিনিষেধ নেই। স্রেফ শাকজাতীয় খাবার না খেলেই হল। শাস্ত্রমতে বুধবার শাক ব্যতীত অন্য সব কিছুই খাওয়া যেতে পারে। এরপর বৃহস্পতি। শ্রী নারায়ণ ও লক্ষ্মীদেবীর বিশেষ প্রিয় বার। এইদিন অবশ্যই দুধজাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত। খেলেও তা শুধুমাত্র নারায়ণের প্রসাদ হিসেবে। এক্ষেত্রে সেই দেবতার প্রিয় খাদ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকে বিভিন্ন শাস্ত্রে। আবার শুক্রবার টকজাতীয় খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এইদিন অনেকেই মাতা সন্তোষীর পুজো করেন। সেই দেবীর পুজোয় টকজাতীয় কিছু থাকা একেবারেই নিষেধ। তাই শুক্রবার খাবারের তালিকায় টক খাবার না থাকাই ভালো। তবে শনিবার বিশেষভাবে নিষেধ রয়েছে তেল জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে। এইদিন গ্রহরাজ শনিকে স্মরণের দিন। সেই উপলক্ষ্যেই তেল জাতীয় খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা। আবার সূর্যের উদ্দেশে রবিবার পালন করেন অনেকে। তাঁরা আবার রবিবার তেলজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন না। তবে সাধারণত রবিবার নুন খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আরও শুনুন: গঙ্গাস্নানে মেলে দশজন্মের পাপ থেকে মুক্তি! দশহরাতে কেন হয় গঙ্গার পুজো?
যদিও এই সবই নির্দিষ্ট কিছু শাস্ত্রের ব্যাখ্যা। এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। তবে স্রেফ খাদ্যাভ্যাস বদল করলেই হবে না, মনের শুদ্ধিকরণও একান্ত প্রয়োজন। যার জন্য দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় ঈশ্বরচিন্তা আবশ্যক। কোনও নির্দিষ্ট দেবতা নন। মনে মনে পরম শক্তির কাছে নিজেকে সমপর্ণ করাই আসল কথা। আর এমনটা করতে পারলেই মন শান্ত থাকতে বাধ্য। যার প্রভাবে কাজের পরিবেশ কিংবা গৃহশান্তি সবই বজায় থাকবে।