তিনি সিদ্ধিদাতা। বিঘ্ননাশ করেন তিনি। তাই সুখ, সমৃদ্ধির কামনায় তাঁর পুজো করেন সাধারণ মানুষ। সকল দেবদেবীর মধ্যে লম্বোদর বিনায়কের পুজোই করা হয় সবার আগে? কিন্তু কেন গণেশের পুজো আগে হয়, জানেন?
কেউ তাঁকে বলেন লম্বোদর। কেউ বলেন বিনায়ক। সিদ্ধিদাতা হিসেবেই গণেশের পুজো করেন সকল মানুষ। তাঁর পুজো করা মানেই সকল বিঘ্নের অবসান। আর তাই গণেশ চতুর্থীতে তাঁর আরাধনা দেশ জুড়ে। তাঁর মূর্তিও মানব জীবনের নানা গুণের প্রতীক। সহনশীলতা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা ইত্যাদির প্রতীক হয়েই আছে গণপতির মূর্তি। অর্থাৎ, তাঁকে ভজনা করার অর্থ, এই সমস্ত বিশেষ গুণাবলীর প্রতিও সম্ভ্রম প্রদর্শন। গণপতির আরাধনা তাই নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু বিশ্বাস মতে গণেশ চতুর্থীই আসলে গণেশের জন্মদিন। তাই এই দিন সারা দেশেই সাড়ম্বরে গণেশ আরাধনার আয়োজন করা হয়। ঘরে ঘরে গণপতিকে প্রণাম করে উচ্চারিত হয় এই মন্ত্র,
একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম।
বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।।
আমরা সকলেই জানি, যে কোনও দেবতার পুজো করার আগে গণেশের পুজো করা হয়। এর নেপথ্যেও রয়ে আছে একটি পৌরাণিক কাহিনী। একবার, দেবতাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তাই নিয়ে চলছিল আলাপ আলোচনা। এ তো যেমন তেমন করে ঠিক করা যায় না। কোনও একটি পরীক্ষা না হলে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ মিলবে কী করে? শেষমেশ ঠিক হল, যে দেবতা সবার আগে ত্রিলোক ভ্রমণ করতে পারবেন, তাঁকেই শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হবে। এই কথা শোনা মাত্র সকল দেবতাই তাঁদের বাহলে চড়ে বেরোলেন ত্রিলোক ভ্রমণে। কিন্তু গণপতি লম্বোদর। তাঁর পক্ষে তো ত্রিলোক ঘুরে আসা সহজ কাজ নয়। এদিকে তাঁর মতো বিচক্ষণতা আর কারই বা আছে! তিনি পিতা-মাতাকে তিনবার ঘুরে প্রণাম করে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এদিকে বাকিরা একে পরিভ্রমণ শেষে ফিরলেন। কিন্তু গণপতি যে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তার সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারলেন না কেউই। ফলে, তাঁকেই দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়। এবং সেইমতো ঠিক করা হয় সকল দেবদেবীর পুজোর আগে গণপতি পুজো পাবেন। এইভাবেই সবার আগে গণেশের পুজো প্রচলিত হয়।
আরও শুনুন: Spiritual: এই জীবনের কর্মফল মানুষকে এই জন্মেই ভোগ করতে হয়
গণপতির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগবেদে। যদিও সেই গণপতি আর বর্তমানে যেভাবে গণেশ পুজো হয়, তার মধ্যে থেকে গিয়েছে অনেকটা সময়। ফলে, বহু পরিবর্তন বা বিবর্তন হয়েছে এর ভিতর। অনেকে মনে করেন, গণেশ অনার্যদের দেবতা ছিলেন। পরে তাঁর আর্যীকরণ সম্পন্ন হয়। গণেশের ইঁদুর বাহন আজও সেই পুরনো সংস্কৃতির সাক্ষ্য হয়ে থেকেছে। গণেশের জন্মকথা ও মূর্তির বিশেষত্ব নিয়েও নানা পৌরাণিক আখ্যান ছড়িয়ে আছে। গণেশ চতুর্থিতে যেমন গণেশ বন্দনা করা হয়, তেমন বাংলার ঘরে ঘরে আবার পয়লা বৈশাখ এবং অক্ষয় তৃতীয়াতেও গণেশ পুজোর রীতি চালু আছে। যে কোনও শুভকাজে সিদ্ধিলাভের উদ্দেশ্যে সকলেই গণেশকে প্রণাম করেই কাজ শুরু করেন। এই রীতি আজও সর্বত্র সম্ভ্রমের সঙ্গে পালন করা হয়।