ঠাকুর বলেন, মায়ের ছেলেরা সব আনন্দ কর! কেন আনন্দ? চারিদিকে দুখ-কষ্টের তো অভাব নেই। তার উপর ঈশ্বর সাধনার পথেও কত না বাধা! তাহলে কেন আনন্দ করা? সে কথাও বলে দেন ঠাকুর। আসুন, শুনে নিই।
একদিন সন্ধ্যা হচ্ছে। ঠাকুর পায়চারী করছেন। ভক্ত মণি একাকী বসিয়া আছেন ও চিন্তা করছেন দেখে, ঠাকুর হঠাৎ তাঁকে সম্বোধন করিয়া সস্নেহে বললেন, “গোটা দু-এক মার্কিনের জামা দিও, সকলের জামা তো পরি না — কাপ্তেনকে বলব মনে করেছিলাম, তা তুমিই দিও।” মণি দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, “যে আজ্ঞা।”
আরও শুনুন: যত গোপী তত কৃষ্ণ… এর ভিতরই লুকিয়ে আছে রাসলীলার মাধুর্য
এই সময়ের বর্ণনা দিয়ে কথামৃতকার লিখছেন- সন্ধ্যা হল। শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে ধুনা দেওয়া হল। তিনি ঠাকুরদের প্রণাম করিয়া, বীজমন্ত্র জপিয়া, নামগান করিতেছেন। ঘরের বাইরে অপূর্ব শোভা! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথি। বিমল চন্দ্রকিরণে একদিকে ঠাকুরবাড়ি হাসিতেছে, আর-একদিকে ভাগীরথীবক্ষ সুপ্ত শিশুরবক্ষের ন্যায় ঈষৎ বিকম্পিত হইতেছে। জোয়ার পূর্ণ হইয়া আসিল। আরতির শব্দ গঙ্গার স্নিগ্ধোজ্জ্বল প্রবাহসমুদ্ভূত কলকলনাদ সঙ্গে মিলিত হইয়া বহুদূর পর্যন্ত গমন করিয়া লয়প্রাপ্ত হইতেছিল। ঠাকুরবাড়িতে এককালে তিন মন্দিরে আরতি — কালীমন্দিরে, বিষ্ণুমন্দিরে ও শিবমন্দিরে। দ্বাদশ শিবমন্দিরে এক-একটি করিয়া শিবলিঙ্গের আরতি। পুরোহিত শিবের একঘর হইতে আর-একঘরে যাইতেছেন। বাম হস্তে ঘণ্টা, দক্ষিণ হস্তে পঞ্চপ্রদীপ, সঙ্গে পরিচারক — তাহার হস্তে কাঁসর। আরতি হইতেছে, তৎসঙ্গে ঠাকুরবাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ হইতে রোশনচৌকির সুমধুর নিনাদ শুনা যাইতেছে। সেখানে নহবতখানা, সন্ধ্যাকালীন রাগরাগিণী বাজিতেছে। আনন্দময়ীর নিত্য উৎসব — যেন জীবকে স্মরণ করাইয়া দিতেছে — কেহ নিরানন্দ হইও না — ঐহিকের সুখ-দুঃখ আছেই; থাকে থাকুক — জগদম্বা আছেন। আমাদের মা আছেন! আনন্দ কর! দাসীপুত্র ভাল খেতে পায় না, ভাল পরতে পায় না, বাড়ি নাই ঘর নাই, — তবু বুকে জোর আছে; তার যে মা আছে। মার কোলে নির্ভর। পাতানো মা নয়, সত্যকার মা। আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আমার কি হবে, আমি কোথায় জাব, সব মা জানেন। কে অত ভাবে! আমার মা জানেন — আমার মা, যিনি দেহ, মন, প্রাণ, আত্মা দিয়ে আমায় গড়েছেন। আমি জানতেও চাই না। যদি জানবার দরকার হয় তিনি জানিয়ে দিবেন। অত কে ভাবে? মায়ের ছেলেরা সব আনন্দ কর!
আরও শুনুন: ভক্ত জানতে চাইলেন ‘রামের ইচ্ছা’ গল্পটা কী, ঠাকুর বললেন…
বাহিরে কৌমুদীপ্লাবিত জগৎ হাসিতেছে; কক্ষমধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ হরিপ্রেমানন্দে বসিয়া আছেন। ঈশান কলিকাতা হইতে আসিয়াছেন, আবার ঈশ্বরীয় কথা হইতেছে। ঈশানের ভারী বিশ্বাস। বলেন, একবার যিনি দুর্গানাম করে বাড়ি থেকে যাত্রা করেন, তাঁর সঙ্গে শূলপাণি শূলহস্তে যান। বিপদে ভয় কি? শিব নিজে রক্ষা করেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ ঈশানকে বললেন, — তোমার খুব বিশ্বাস — আমাদের কিন্তু অত নাই। সবাই যখন হাসছেন, তখন ঠাকুর বললেন বিশ্বাসেই তাঁকে পাওয়া যায়।
শুনে নিন বাকি অংশ।