অহংকার মানুষের পথরোধ করে দাঁড়ায়। তার ঈশ্বরসাধনার পথের কাঁটা হল এই অহংকার। কিন্তু একবার তা নাশ হলে দেখা মেলে আলোর। সেই আলোই হল ঈশ্বরদর্শন।
ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ একবার ভক্তদের মুখে মহারাষ্ট্রের এক রমণীর কথা শুনলেন। তিনি পণ্ডিত। বিলেতে গিয়েছিলেন। গিয়ে খ্রিস্টান হয়েছেন। ভক্তরা জানতে চাইলেন, ঠাকুর কি তাঁর নাম শুনেছেন? ঠাকুর বললেন, নাম শোনেননি বটে, তবে, ভক্তমুখে যা শুনলেন তাতে তাঁর মনে হচ্ছে ওঁর লোকমান্য হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। ঠাকুর বললেন, এইরকম অহংকার ভালো নয়। ‘আমি করছি’ এই ভাবই হল অজ্ঞান। আর জ্ঞান হল এই ভাব, যখন মনে হয় যে, হে ঈশ্বর সব তুমিই করছ। ঠাকুর তাই বলেন, ঈশ্বরই কর্তা আর সব অকর্তা।
আরও শুনুন: Spiritual: ঈশ্বরলাভে কেন দেরি হয়ে যায় মানুষের?
‘আমি’ মানেই দুর্গতি। সে কিছুতেই একজনকে বড় হতে দেয় না। পিছুটানে টেনে রাখে। ঠাকুর তাই বলেন, ‘আমি আমি’ করলে যে দুর্গতি হয় বাছুরের অবস্থা ভাবলে বুঝতে পারবে। বাছুর ‘হাম মা’ ‘হাম মা’ করে। তার দুর্গতি দেখ। হয়তো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাঙল টানতে হচ্ছে। রোদ নেই। বৃষ্টি নেই। হয়তো কসাই কেটে ফেলল। মাংসগুলো লোক খাবে। ছালটা চামড়া হবে। সেই চামড়ায় জুতো- এই সব তৈরি হবে। লোকে তার উপর পা দিয়ে চলে যাবে। তাতেও দুর্গতির শেষ হয় না। চামড়ার ঢাক তৈরি হবে। আর ঢাকের কাঠি দিয়ে অনবরত চামড়ার উপর আঘাত করবে। অবশেষে কিনা নাড়িভুড়িগুলো নিয়ে ধুনুরির তাঁত তৈরি হয়, তখন ধোনবার সময় তুঁহু তুঁহু বলে। । আর ‘হাম মা’ ‘হাম মা’ বলে না। ‘তুহুঁ তুহুঁ’ বলে, তবেই নিস্তার, তবেই মুক্তি। এরপর ঠাকুর বললেন, জীবও যখন বলে হে ঈশ্বর আমি কর্তা নই, তুমিই কর্তা – আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী তখনই জীবের সংসার যন্ত্রণা শেষ তখন জীবের মুক্তি হয়, আর এ কর্মক্ষেত্রে আসতে হয় না।
আরও শুনুন: Spiritual: কামিনী-কাঞ্চন আঁশচুপড়ির মতো, সাধুসঙ্গেই মেলে ফুলের গন্ধ
একজন ভক্ত তখন প্রশ্ন করেন, জীবের তাহলে এমন অহংকার যাবে কেমন করে? ঠাকুর জবাব দেন, ঈশ্বরকে দর্শন না করলে অহংকার যায় না। আর যদি কারও অহংকার যায়, তবে তাঁর অবশ্যই ঈশ্বরদর্শন হয়েছে। এখন ঈশ্বরদর্শন যে হয়েছে, তা বোঝা যাবে কী উপায়ে? ঠাকুর বলেন, তাঁর হবে বালকের স্বভাব। সে ত্রিগুণাতীত। কোনও গুণের আঁট নেই। আবার শুচি অশুচি দুই-ই তাঁর কাছে সমান। এই বাবুর মতো সাজে গোজে, আবার খানিক পরে ন্যাংটা।
বাকি অংশ শুনে নিন।