দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজো – কোন পুজো কোন মাসে হয়, তা আমাদের সকলেরই জানা। তবে শীতের শুরুতে হেমন্তের বিষণ্ণতায় কোন দেবতার আরাধনা করা হয়, তা আমাদের অনেকেরই অজানা। আমরা কথা বলছি অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে। এই মাসেও বিধান আছে নির্দিষ্ট কিছু দেবতার পুজোর বিধান। তারই খোঁজ দিচ্ছেন শুকদেব গোস্বামী।
আমাদের পুজোপার্বণের সঙ্গে ঋতু ও মাসের অভিন্ন সংযোগ। শরৎ ও কাশ মানে দুর্গাপুজো। কুয়াশাঘেরা শীতের সকালে শাঁখ বাজছে মানে সরস্বতী পুজো। কিন্তু অগ্রহায়ণ মাসে কোন পুজো হয় তা কি আমরা জানি? একে তো হেমন্ত ঋতুটাকে শহরের খাঁচায় ভাল করে বোঝা-ই যায় না, তায় এই সময়টায় মস্ত একটা উৎসব পেরিয়ে আসার নরম ঝিমুনির রেশ লেগে থাকে সর্বত্র।
আরও শুনুন: শুভ কাজের সূচনায় কেন ফাটানো হয় নারকেল?
অনেকেই জানে না, অগ্রহায়ণ মাসে উত্তর ভাদ্রপদ ও মৃগশিরা নক্ষত্র অবস্থান করে। তাই যথাবিহিত নিয়ম মেনে এই মাসে দেবী কাম্যাক্ষা-সহ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের পুজো-পাঠ করা যায়। এই মাস ত্রিদেবের আরাধনার মাস। পূজান্তে গোবৎস উৎসর্গ করার নিয়ম আছে। অনেকে নীলকৃষ্ণ-ও উৎসর্গ করে। পুজোপদ্ধতির প্রতিটি ধাপ ও অনুশাসন ভক্তি ভরে অনুসরণ করলে অগ্রহায়ণ মাসেও সাধক-সাধিকার সর্বসিদ্ধি হবে বলে বিধান দিয়েছেন শাস্ত্র-রচয়িতারা। মনে রাখতে হবে, আন্তরিক ভক্তি-ই যে কোনও পুজোর প্রধান চালিকাশক্তি।
আরও শুনুন: কেন নৃসিংহ অবতার ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু?
আবার এই সময়েই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পুজো হয় ইতুলক্ষ্মীর। ইনি লৌকিক দেবী। কার্তিক মাসের সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে গোটা অগ্রহায়ণ মাস জুড়েই চলে ইতুপুজো। সাধারণত সধবারা পরিবারের মঙ্গলকামনা এই পুজো করেন। পুজো করেন কুমারীরাও। কোনও কোনও মতে বৈদিক ইন্দ্রপুজো বা সূর্যপুজোর সঙ্গেও সংযোগ আছে ইতুপুজোর।
আরও শুনুন: ‘বিদ্রোহী ভৃগু’ কেন ভগবানের বুকে এঁকে দিয়েছিলেন পদচিহ্ন?
অনেকেরই একটা ধারণা আছে যে ভাদ্র, পৌষ এবং চৈত্র মাসে নাকি কোনও পুজোপাঠ হয় না। এগুলি ‘মল মাস’, অশুভ। কিন্তু শাস্ত্র বলছে, রাশিচক্রের সূক্ষ্ম বিচার না করে ‘অশুভ’ তকমা দেওয়া ঠিক নয়। দরকারে সব মাস, এমনকী সব দিন-ই শুভ সাব্যস্ত হতে পারে। সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পারলে ও নিখুঁত শাস্ত্রজ্ঞান থাকলে প্রতিটি পুজো আমাদের ভাগ্যোন্নতির সহায়ক হতে পারে।