টাকা মাটি, মাটি টাকা। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বিখ্যাত এই উক্তি। কিন্তু এ কথা বলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন ঠাকুর? সত্যিই কি অর্থের কোনও গুরুত্ব নেই। তাহলে জীবনরক্ষা হবে কেমনে? ভক্তমনে তাই প্রশ্ন জাগে, ঠাকুরের মনে কি কোনোদিন অন্নচিন্তা জাগেনি? আজ শুনব সেই গল্প।
ভক্তদের কথায় কথায় কত না পথের দিশা দেখিয়ে দেন ঠাকুর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁর বলার ধরনই তো এমন। গল্পে গল্পে জীবনের গূঢ় সত্যটা সকলের সামনে তুলে ধরা। এইভাবেই তো এসেছিল ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি- টাকা মাটি মাটি টাকা। আর এ কথা আজ শুনে অনেকেই ভাবেন, তবে বুঝি সংসারের সবকিছুই অর্থহীন। অর্থের কোনও গুরুত্ব নেই। এদিকে অর্থ যদি না থাকে তবে সংসাররক্ষা হয় কী করে? এ প্রশ্ন ঠাকুরের নিজেরও তো অজানা নয়। তাই একদিকে তিনি বলছেন, মন থেকে সব ত্যাগ না হলে ঈশ্বরলাভ হয় না। সাধু সঞ্চয় করতে পারে না। সঞ্চয় না করে “পন্ছী আউর দরবেশ।” পাখি আর সাধু সঞ্চয় করে না। এখানকার ভাব, — হাতে মাটি দেবার জন্য মাটি নিয়ে যেতে পারি না। বেটুয়াটা করে পান আনবার জো নাই। হৃদে যখন বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে, তখন এখান থেকে কাশী চলে যাব মতলব হল। ভাবলুম কাপড় লব — কিন্তু টাকা কেমন করে লব? আর কাশী যাওয়া হল না।
আরও শুনুন: Spiritual: প্রকৃত সাধু চেনা যায় কোন উপায়ে? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন…
এই কথা শুনে সকলে যখন হাসছেন, তখন ঠাকুর আবার অন্য দিক ধরিয়ে দিয়ে বলছেন, “তোমরা সংসারী লোক। এও রাখ, অও রাখ। সংসারও রাখ, ধর্মও রাখ।” এখন ভক্তের প্রশ্ন হল, ‘এ, ও’ কি আর থাকে? এই সেই জিজ্ঞাসা। তাই শুনে ঠাকুর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছেন, আমি পঞ্চবটীর কাছে গঙ্গার ধারে ‘টাকা মাটি, মাটিই টাকা, টাকাই মাটি’, এই বিচার করতে করতে যখন গঙ্গার জলে ফেলে দিলুম, তখন একটু ভয় হল। ভাবলুম, আমি কি লক্ষ্মীছাড়া হলুম! মা-লক্ষ্মী যদি খ্যাঁট বন্ধ করে দেন, তাহলে কি হবে। তখন হাজরার মতো পাটোয়ারী করলুম। বললুম, মা! তুমি যেন হৃদয়ে থেকো! একজন তপস্যা করাতে ভগবতী সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, তুমি বর লও। সে বললে, মা যদি বর দিবে, তবে এই কর যেন আমি নাতির সঙ্গে সোনার থালে ভাত খাই। এক বরেতে নাতি, ঐশ্বর্য, সোনার থাল সব হল! এই না শুনে সকলে হেসে একেবারে গড়িয়ে পড়লেন।
আরও শুনুন: ঠাকুর বলেন, মায়ের ছেলেরা সব আনন্দ কর…
ঠাকুর এবার এক এক করে বলছেন, “মন থেকে কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ হলে ঈশ্বরে মন যায়, মন গিয়ে লিপ্ত হয়। যিনি বদ্ধ, তিনিই মুক্ত হতে পারেন। ঈশ্বর থেকে বিমুখ হলেই বদ্ধ — নিকতির নিচের কাঁটা উপরের কাঁটা থেকে তফাত হয় কখন, যখন নিকতির বাটিতে কামিনী-কাঞ্চনের ভার পড়ে। ছেলে ভূমিষ্ঠ হয়ে কেন কাঁদে? গর্ভে ছিলাম, যোগে ছিলাম’। ভূমিষ্ঠ হয়ে এই বলে কাঁদে — কাঁহা এ, কাঁহা এ; এ কোথায় এলুম, ঈশ্বরের পাদপদ্ম চিন্তা করছিলাম, এ আবার কোথায় এলাম। “তোমাদের পক্ষে মনে ত্যাগ — সংসার অনাসক্ত হয়ে কর।”
বাকি অংশ শুনে নিন।