জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম – সবকিছুরই আলাদা মূল্য আছে। শুধু বুঝে নিতে হবে কোন সময়ে কোনটি জরুরি। তা সে কথা আমরা বুঝব কেমন করে? এর জন্য আমাদের শরণ নিতে হবে মহাপুরুষের। আমরা যদি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মুখের বাণী শুনি, তাহলে সেখানেই আমরা পেয়ে যাব প্রার্থিত পথের সন্ধান।
পথের সন্ধান। জীবনের এই হল আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই পথ আসলে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোনোর পথ। কোন পথে গেলে, কোন সাধনার ধারায় মিশতে পালে তবে ঈশ্বরলাভ সম্ভব, এটুকু বুঝতে বুঝতেই অনেক সময় কেটে যায়। আর মহাপুরুষ যাঁরা, যাঁরা এই সমস্ত পথ ভ্রমণ করে জেনেছেন সারবস্তু, তাঁরা অবললীলায় বাতলে দিতে পারেন দিকনির্দেশ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, দেখ, অমৃত সাগরে যাবার অনন্ত পথ। যে কোন প্রকারে এ-সাগরে পড়তে পারলেই হল। মনে কর অমৃতের কুণ্ড আছে। কোনরকমে এই অমৃত একটু মুখে পড়লেই অমর হবে। তা তুমি নিজে ঝাঁপ দিয়ে পড়, বা সিঁড়িতে আসতে আসতে নেমে একটু খাও বা কেউ তোমায় ধাক্কা মেরে ফেলেই দিক। একই ফল। একটু অমৃত আস্বাদন করলেই অমর হবে। অনন্ত পথ- তার মধ্যে জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি – যে পথ দিয়া যাও, আন্তরিক হলে ঈশ্বরকে পাবে।
আরও শুনুন: Spiritual: ঈশ্বরলাভে কেন দেরি হয়ে যায় মানুষের?
ঠাকুর বলেন, কলিযুগের পক্ষে ভক্তিযোগ সহজ পথ। ভক্তিযোগই যুগধর্ম। কেন বলেন? বলেন কেননা, বাকি যে দুই পথ সে পথ ধরে চলার কিছু সমস্যা আছে। ঠাকুর বলেন, কর্মযোগ বড় কঠিন। আগেই বলেছি সময় কই? শাস্ত্রে যে সব কর্ম করতে বলেছে, তার সময় কই? কলিতে আয়ু কম। তারপর অনাসক্ত হয়ে, ফল কামনা না করে, কর্ম করা কঠিন। ঈশ্বরলাভ না হলে ঠিক অনাসক্ত হওয়া যায় না। তুমি হয়তো জানো না, কিন্তু কোথা থেকে আসক্তি এসে পড়ে।
আরও শুনুন: Spiritual: কামিনী-কাঞ্চন আঁশচুপড়ির মতো, সাধুসঙ্গেই মেলে ফুলের গন্ধ
জ্ঞানযোগও এ যুগে বড় কঠিন। জীবের একে অন্নগত প্রাণ। তাতে আয়ু কম। আবার দেহবুদ্ধি কোনও মতে যায় না। এদিকে দেহবুদ্ধি না গেলে একেবারে জ্ঞানী হবে না। জ্ঞানী বলে, আমি সেই ব্রহ্ম; আমি শরীর নই, আমি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, রোগ, শোক, জন্ম, মৃত্যু, সুখ, দুঃখ – এ সকলের পার। যদি রোগ, শোক, সুখ দুঃখ এসবের বোধ থাকে, তুমি জ্ঞানী কেমন করে হবে? এদিকে কাঁটায় হাত কেটে যাচ্ছে, দরদর করে রক্ত পড়ছে, খুব লাগছে- অথচ বলছে, কই হাত তো কাটে নাই। আমার কী হয়েছে?
বাকি অংশ শুনে নিন।