ঠাকুরের এক ভক্ত শম্ভুচন্দ্র মল্লিক একদিন বললেন, দাতব্য কাজে তিনি বেশ কিছু অর্থব্যয় করবেন বলে মনস্থ করেছেন। এ কথা ঠাকুরকে তিনি জানালেন। সকলেই ভাবলেন, ঠাকুর নিশ্চয়ই এ কাজে তাঁকে উৎসাহ দেবেন। কিন্তু শম্ভুচন্দ্রের প্রস্তাব শুনে ঠাকুর একটু কড়া সুরেই কথা বলতে শুরু করলেন।
ঠাকুর তো বললেন জীবজ্ঞানে শিব সেবা করতে। শিষ্যদের দিলেন সেই মহামন্ত্র। কিন্তু সকলেই যে এর গূঢ় অর্থ বুঝতে পারলেন, তা নয়। অনেকেই ভাবলেন গরিবকে ধ্যানধ্যান করার কথাই বোধহয় বলছেন ঠাকুর। একদিন ঘটল এক ঘটনা। যেখানে ঠাকুর আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন, আসলে তিনি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন।
আরও শুনুন – শ্রীরামকৃষ্ণের দাস (পর্ব ৩১): গুরুর বাণীর রহস্য জগৎবাসীকে শোনানোর প্রতিজ্ঞা নরেন্দ্রনাথের
ঠাকুরের এক ভক্ত শম্ভুচন্দ্র মল্লিক একদিন বললেন, দাতব্য কাজে তিনি বেশ কিছু অর্থব্যয় করবেন বলে মনস্থ করেছেন। এ কথা ঠাকুরকে তিনি জানালেন। সকলেই ভাবলেন, ঠাকুর নিশ্চয়ই এ কাজে তাঁকে উৎসাহ দেবেন। কিন্তু শম্ভুচন্দ্রের প্রস্তাব শুনে ঠাকুর একটু কড়া সুরেই কথা বলতে শুরু করলেন। বললেন, প্রতিদানের আশা মনে না রেখে যদি এমন কাজ করা যায় তবে নিশ্চয়ই তা মহৎ কাজ। কিন্তু এমন মনের ভাব রেখে কাজ করে যাওয়া খুব কঠিন। শিষ্যদের উপদেশ দিয়ে ঠাকুর তাই বললেন, “এসব কাজ মানুষের পূর্ণতালাভের উপায় মাত্র, উদ্দেশ্য নয়।” এই কথা শুনে সকলেই অবাক হলেন। ঠাকুর তখন বুঝিয়ে দিলেন তাঁর বক্তব্য। বললেন, “ভগবানকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসা এবং তাঁকে পাওয়াই মানুষের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। এরপর ভক্তের দিকে তাকিয়ে তিনি জানতে চাইলেন, আচ্ছা বলোতো, ভগবান যদি এখন তোমায় দেখা দেন, তুমি তাঁর কাছে কী চাইবে? কয়েকটা হাসপাতাল আর ডিসপেন্সারি চাইবে, না সর্বক্ষণ তাঁর দর্শন আর কৃপালাভ যাতে হয়, তাই চাইবে? ভুলে যেও না, ভগবানই সত্য, বাকি সব অনিত্য। মৃত্যুর পূর্বেই তাকে লাভ করার জন্য সাধনায় ডুবে যাও। ভগবানকে ভুলে গিয়ে কতগকগুলো দাতব্য কর্মানুষ্ঠানে জড়িয়ে যাওয়া তোমার মতো লোকের শোভা পায় না।”
আরও শুনুন – শ্রীরামকৃষ্ণের দাস (পর্ব ২৯): মানুষ বড় কাঁদছে, মথুরবাবুকে বলে তাঁদের অন্নের ব্যবস্থা করলেন ঠাকুর
এই কথা ঠাকুরই বললেন। সেই ঠাকুর, যিনি দেওঘরে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। দুঃখী মানুষের পাশে বসে যিনি কাঁদতেন। তিনিই আবার বললেন এই কথা। অনেকেই এর ভুল ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু আসলে ঠাকুরের বাণী আর তাঁর এই কথার মধ্যে সত্যিই কোনও বিরোধ নেই। ঠাকুর যে জীবসেবার কথা বলেছিলেন, তা সাধনার আংশিক উপায় নয়। বরং সেটাই সত্যিকার সাধনা। আর শম্ভুবাবু যখন দানের কথা বলছেন, তখন ভগবানলাভ নয়, দান করার আগ্রহই তাঁর মধ্যে বেশি। সাধারণ মানুষ এইরকম সাধারণ ভাব নিয়েই দানে প্রবৃত্ত হন। কিন্তু ঠাকুর এই সমাজসেবার কথা শুধু বলছেন না। বলছেন, মানুষকেই ঈশ্বর রূপে দেখতে। মানুষের সেবা যেন ঈশ্বরেরই সেবা হয়। তা যেন কখনও দানের অহংকারে আটকে না যায়। তাই যিনি ভেবেচিন্তে সমাজসেবা করবেন বলে ঠিক করেছেন, তাকে ঠাকুর ধরিয়ে দিলেন গূঢ় তাৎপর্যটি। বলে দিলেন, ঈশ্বরলাভই প্রকৃত উদ্দেশ্য। আগে তার জন্যেই মনকে প্রস্তুত করতে হবে। এ কথা ঠাকুর আরও একবার আর এক ঘটনায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা পরবর্তী পর্বে শুনব সে কথা।