শাস্ত্রে কর্মকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হিন্দুদের নিত্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে পঞ্চ মহাযজ্ঞের বিধানও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, এই যজ্ঞই চালনা করছে জগতকে। যা আসলে বলে কর্ম করে যাওয়াই ধর্ম। ঠিক একইরকম কথা বলতেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ। আসুন তাঁর কথা শুনে নিই।
ঈশ্বরসাধনা আর কর্মের মধ্যে অনেকেই যোগসূত্র পান না। ভক্ত যে জন, তিনি পড়েন নানা সমস্যায়। কর্ম করতে গেলে ঈশ্বর ভজনের সময় হয় না। আবার উলটোটাও সত্যি। এ যেন মস্ত এক দ্বন্দ্ব। মহাপুরুষরা ঠিক এইখানেই আমাদের আলো দেখান। মনের সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিরসন করেন। যেমনটি করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ।
সেবার ঠাকুর বসে আছেন ভক্তদের মধ্যে। এক একজন ভক্ত নিজের মনের প্রশ্ন করছেন, আর ঠাকুর তার উত্তর দিচ্ছেন। ভক্ত জানতে চাইলেন, মহাশয় আপনার যে ভাব সমাধি হয়, কেন হয়, কীভাবে হয়? আমাদের বুঝিয়ে দিন।
আরও শুনুন: Spiritual: ঠাকুর বলতেন, সংসারে থাকতে হয় পিঁপড়ের মতো হয়ে…
ঠাকুর বললেন, শ্রীমতীর মহাভাব হত; সখীরা কেউ ছুঁতে গেলে অন্য সখী বলত, কৃষ্ণবিলাসের অঙ্গ ছুঁসনি। এঁর মধ্যে এখন কৃষ্ণ বিলাস করছেন। ঈশ্বর অনুভব না হলে ভাব বা মহাভাব হয় না। গভীর জল থেকে মাছ এলে জলটা নড়ে। তেমন মাছ এলে জল তোলপাড় করে। তাই ‘ভাবে হাসে কাঁদে, নাচে গায়’। একটু থেমে ঠাকুর আবার বলছেন, অনেকক্ষণ ভাবে থাকা যায় না। আয়নার কাছে বসে কেবল মুখ দেখলে লোকে পাগল বলবে।
আরও শুনুন: Spiritual: ‘লোহার তরোয়াল সোনার হলে আর কারও অনিষ্ট করে না’
এবার সেই ভক্তই প্রশ্ন করলেন, মহাশয় ঈশ্বরদর্শন করে থাকেন, তাহলে আমাদেরও দেখিয়ে দিন। ঠাকুর বললেন, সবই ঈশ্বরাধীন। মানুষ কী করবে? তাঁর নাম করতে করতে কখনও ধারা পড়ে; কখনও পড়ে না। তাঁর ধ্যান করতে এক-একদিন বেশ উদ্দীপন হয়। আবার একদিন কিছুই হল না। এরপর ঠাকুর সেই ভক্তকে উদ্দেশ্য করেই যেন সকলকে বললেন, কর্ম চাই, তবে দর্শন হয়। একদিন ভাবে হালদার পুকুর দেখলুম। দেখি, একজন ছোটোলোক পানা ঠেলে জল নিচ্ছে, আর হাত তুলে তুলে এক-একবার দেখছে। যেন দেখালে, পানা না ঠেললে জল দেখা যায় না। কর্ম না করলে ভক্তিলাভ হয় না। ঈশ্বরদর্শনও হয় না। ধ্যান, জপ এইসব কর্ম, তাঁর নাম গুণকীর্তনও কর্ম। আবার দান, যজ্ঞ এ-সবও কর্ম।
বাকি অংশ শুনে নিন।