দেবী লক্ষ্মীর অভিশাপেই মৃত্যু হয়েছিল লঙ্কাধিপতি রাবণের। আমরা জানি, সীতা হরণের অপরাধেই নরচন্দ্রমা শ্রীরামচন্দ্র বধ করেন রাবণকে। তার আগে তিনি মহামায়র শরণও নিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে লক্ষ্মীর অভিশাপ কীভাবে যুক্ত হল, আজ শুনে নেব সে কথাই।
বৃহস্পতিবার ঘরে ঘরেই হয় লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন। ধন, সম্পদ, ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যের দেবী হিসাবে আরাধনা করা হয় মা লক্ষ্মীর। হিন্দু ভক্তের কাছে পরম আরাধ্যা তিনি। কথিত আছে, সমুদ্রমন্থনকালে উঠে এসেছিলেন দেবী লক্ষ্মী। স্বর্গের শ্রী ফিরেছিল তাঁর আগমনে। সংসারের সম্পদ ও শ্রী অক্ষুণ্ণ রাখতেই তাঁর আশীর্বাদ কামনা করেন ভক্তরা। বৃহস্পতিবারকে তাই অনেকেই বলে থাকেন লক্ষ্মীবার।
এই লক্ষ্মী দেবীর শান্ত-সৌন্দর্যময় রূপটি সম্পর্কেই আমরা পরিচিত। তবে তাঁর ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেওয়ার ঘটনাও আছে। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনির ভিতর আছে তার প্রমাণ। সেরকমই এক কাহিনি জানায়, দেবী লক্ষ্মীর অভিশাপেই মৃত্যু হয়েছিল লঙ্কাধিপতি রাবণের। আমরা জানি, সীতা হরণের অপরাধেই নরচন্দ্রমা শ্রীরামচন্দ্র বধ করেন রাবণকে। তার আগে তিনি মহামায়ার শরণও নিয়েছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে লক্ষ্মীর অভিশাপ কীভাবে যুক্ত হল, আজ শুনে নেব সে কথাই।
আরও শুনুন – সোমবার শিবের উপাসনার দিন, এর নেপথ্যে আছে কোন গল্প?
এই কাহিনির উৎস সন্ধানে আমাদের ফিরতে হবে মা সীতার পূর্বজন্মে। জনকদুহিতা আগের জন্মে ছিলেন কুশধ্বজের কন্যা বেদবতী। মা লক্ষ্মীর অংশেই তাঁর জন্ম। অর্থাৎ বেদবতী ছিলেন মা লক্ষ্মীর প্রথম মর্ত্য অবতার। একসময় কুশধ্বজ দেবী লক্ষ্মীর তপস্যা করেছিলেন। তখন কুশধ্বজের বাবা রথধ্বজের কৃতকর্মের জন্য সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তাঁরা। মা লক্ষ্মী কুশধ্বজের তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। বর দিতে চাইলে, কুশধ্বজ তাঁদের হারানো সম্পত্তি ফিরে চান। সে প্রার্থনা মঞ্জুর হয়। আরো একটি বড় চান কুশদ্ধজ্বজ। মা লক্ষ্মীকে চান কন্যা হিসাবে। মা সেই প্রার্থনাও মঞ্জুর করেন। জন্ম হয় বেদবতীর।
আরও শুনুন – কেন স্বয়ং নারায়ণ জ্ঞানে পুজো করা হয় শালগ্রাম শিলা?
বেদবতী ছিলেন যেমন সুন্দরী তেমনই প্রজ্ঞাবতী। নারায়ণকে স্বামী রূপে পাবার জন্য তিনি একসময় তপস্যা শুরু করেন। সেই কঠোর তপস্যায় দেবতাদের মন গলে। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়, এই জন্মে তিনি নারায়ণকে পতিরূপে পাবেন না। মর্ত্যের পরজন্মে তাঁর আশা পূর্ণ হবে। দৈববাণীতে এ কথা শুনেও তপস্যা ত্যাগ করলেন না বেদবতী। একদিন তপস্যারত বেদবতীকে দেখে ফেলেন লঙ্কারাজ রাবণ। তিনি কামনা করেন বেদবতীকে। কিন্তু কোনও কথায় কর্ণপাত করেননি যুবতী বেদবতী। তিনি তাঁর তপস্যায় অবিচল থাকেন। ধৈর্য হারিয়ে উগ্র রাক্ষসরাজ তখন বেদবতীর চুল ধরে আকর্ষণ করেন। এই অপমানে ক্রুদ্ধ হন বেদবতী। অভিশাপ দেন, যে, যে অপরাধ রাবণ করেছেন তার ক্ষমা নেই। এখন তিনি প্রাণত্যাগ করছেন। পরজন্মে আবার তিনি ফিরবেন মর্ত্যে। আর তাঁর কারণে মৃত্যু হবে রাবণের।
এই বেদবতীই জনকরাজার কন্যা সীতা। অর্থাৎ মা সীতা মা লক্ষ্মীরই অংশ। বেদবতী বা দেবী লক্ষ্মীর অভিশাপ বৃথা যায়নি। সীতাহরণের অপরাধেই ভগবান বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্র বধ করেন রাবণকে।