আমি বিদ্রোহী ভৃগু ভগবানবুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন- কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার এই বিখ্যাত পঙক্তি আমাদের সবার জানা। কিন্তু, কেন ঋষি ভৃগু ভগবানের বুকে এঁকে দিয়েছলেন পদচিহ্ন? এই কাহিনির নেপথ্যে কোন বার্তাটি আমাদের জন্য তোলা আছে? আসুন শুনে নিই সে-গল্প।
একবার কয়েকজন ঋষি মিলে এক যজ্ঞ সম্পাদন করছিলেন। যজ্ঞের পৌরহিত্য করছিলেন মহর্ষি কাশ্যপ। যজ্ঞ তো তারা করছেন দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে, কিন্তু কোন দেবতা এই যজ্ঞে সন্তুষ্ট হবেন? দেবর্ষি নারদ যখন তাঁদের এই প্রশ্ন করলেন, তখন তাঁরা এর উত্তর দিতে পারলেন না। তখন সেই ঋষিরা এলেন ভৃগুর কাছে। প্রশ্ন করলেন, যজ্ঞের ফলে কোন দেবতা তুষ্ট হবেন? এই প্রশ্নে যে গূঢ় প্রশ্নটি নিহিত আছে, তা হল, দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তবে কে? ভৃগু চললেন এই উত্তর সন্ধানে। প্রথমে তিনি গেলেন সত্যলোকে। সেখানে ব্রহ্মার বিরাজ। ভৃগু পৌঁছে দেখলেন, ব্রহ্মা তখন নারায়ণের স্তব করছেন। পাশেই বসে আছেন দেবী সরস্বতী। ব্রহ্মা চার মুখে বেদ পাঠ করছেন। ভৃগু তাঁকে প্রণাম করলেন। কিন্তু মগ্ন ব্রহ্মা তা খেয়ালই করলেন না।
আরও শুনুন: ঠাকুরের কথা ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’… তাই বলে কি সংসারে মন না-দিতে বলেন?
ভৃগু এবার চললেন কৈলাসে। সেখানে আছেন মহেশ্বর। এবারও ভৃগু দেখলেন, মহেশ্বর পার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে ধ্যানমগ্ন। ভৃগু তাঁকে ডাকলেন বটে, কিন্তু সে আওয়াজ শিবের কানে পৌঁছাল না। তখন ভৃগু রওনা দিলেন বৈকুণ্ঠের দিকে। সেখানে বিরাজ করছেন স্বয়ং বিষ্ণু। ভৃগু গিয়ে দেখলেন, বিষ্ণু আদিশেষের শয্যায় শয়নরত অবস্থায় বিরাজমান, আর মহালক্ষ্মী তাঁর পদসেবা করছেন। আগের মতোই ভৃগু এবারও ডাকলেন, আর বাকি দুজনের মতো বিষ্ণুও তাঁকে কোনও উত্তর দিল না। ভৃগু তখন ঠিক করলেন, বিষ্ণুর হৃদয়ে যেখানে মহালক্ষ্মীর বাস, সেখানেই তিনি পদাঘাত করবেন। করলেনও তাই। এদিকে এই ঘটনার পর ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং ভৃগুর পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন, যাতে ঋষির পায়ে কোনও আঘাত না লাগে। কথিত ছিল, ভৃগুর পায়ে নাকি একটি অতিরিক্ত চোখ আছে। বিষ্ণু যখন ভৃগুর পায়ে হাত বোলাচ্ছেন, তখন সেই অতিরিক্ত চোখেও চাপ দিলেন।
আরও শুনুন: প্রকৃত সাধু চেনা যায় কোন উপায়ে? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন…
পায়ে থাকা এই চোখ আসলে ছিল অহংকারের প্রতীক। প্রকৃত জ্ঞানচক্ষুর তো পায়ে থাকার কথা নয়। অহংকার সবাইকে নিচেই টেনে রাখে। তাই বোধহয় এই চোখ ছিল পায়ে। বিষ্ণু সেই চোখ যে কত অসার তা বুঝিয়ে দিলেন ভৃগুকে। আর তা বোঝাতে ভক্তের পদচিহ্ন ধারণ করেছিলেন বুকে। ঋষি ভৃগুও বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ভুল। তখনই তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন ভগবান বিষ্ণুর কাছে। উপলব্ধি করেন বিষ্ণুই দেবতামধ্যে শ্রেষ্ঠ।
বাকি অংশ শুনে নিন।