এই প্রকৃতির সবকিছুই জীবজন্তু, গাছপালা, পশুপাখি ঈশ্বরের সৃষ্টি। এই জগতে যা ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে সবই ঈশ্বর নির্দিষ্ট। তুচ্ছ মনুষ্যজাতি কাঠের পুতুল মাত্র। অদৃশ্য সুতো ধরা থাকে ঈশ্বরের হাতে। শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
মানুষ কাজ করে প্রকৃতির গুণ অনুসারে। প্রকৃতি অর্থাৎ, সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ। কিছু মানুষ আছেন যাঁরা কাজ করেন আত্মসুখের আশায়। কিছু মানুষ কাজ করেন স্বার্থহীন হয়ে। সাধারণ মানুষ কাজ করে নিজের প্রয়োজনে ও ভোগসুখের আশায়। সে অর্থে এই কাজ কখনও মহৎ কাজের আখ্যা পেতে পারে না। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ কাজ করে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে। এই কাজে প্রয়োজন বিশ্বাস, ধৈর্য ও নিষ্ঠা। এই মহান কাজে যাঁরা ব্রতী হন, তাঁরাই সমাজে মহৎ ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি পান।
আরও শুনুন: Spiritual: ব্রহ্মজ্ঞান কী? জীবের মুক্তির উপায়-ই বা কী?
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলছেন,
যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে।।
অর্থাৎ, সমাজের যিনি শ্রেষ্ঠ তার নির্দেশিত পথই সাধারণ মানুষ অনুসরণ করে। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রবর্তিত রীতি মেনে চলাই তাদের অবশ্য কর্তব্য। মহান যিনি তাঁর কাজই হল কল্যাণকাজে সমাজকে ব্রতী করে তোলা।
অপরকে দীক্ষিত করার করার মূল মন্ত্র হল নিজেকে শুদ্ধ করা। যে ব্যক্তি শুদ্ধাচার জানেন না বা মানেন না তার পক্ষে অন্য কাউকে সেই পথ অনুসরণ করতে বলা অর্থহীন।
আরও শুনুন: Spiritual : ঈশ্বর কখন শোনেন মানুষের প্রার্থনা?
সংসারী মানুষ ষড়রিপুর অধীন। নিষ্কাম জীবন তার পক্ষে সম্ভব নয়। কামনা, বাসনা, লোভ, রসনায় তাঁর অন্তরের মনুষ্যত্বের জাগরণ হয় না। বিকশিত হয় না তাঁর মানবিক বোধ।
জন্ম মৃত্যু এই দুই সত্য নিয়েই মানব জীবন। আজ যা বর্তমান আগামিদিনে তাই অতীত। এই সারসত্যকে ভুলে আমরা স্বার্থের পিছনে ছুটি। অপরের ক্ষতি করে নিজের ভবিষৎ কে সুরক্ষিত করার নেশায় দৌড়ই। এই পথ পাপ ও তঞ্চকতার। সাময়িক সুখের এ পথে মোক্ষ লাভ হয় না। অসাধু ব্যক্তি ভুলে যায় আজ সে যা অন্যায় করছে তা একদি বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে তার জীবনে। এই উপলব্ধি থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে রেখে জীবনের সম্ভোগ আনন্দে মেতে থাকি। জীবনের আসল সত্য হল নিষ্কাম, নিঃস্বার্থ জীবন যাপন। আর এটাই মোক্ষলাভের একমাত্র পথ।